রোহিঙ্গা সাজিয়ে পাঁচ শিশুকে দুর্নীতি মামলার আসামি করেছিলেন চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ

|

অপূর্ব আলাউদ্দিন:

রোহিঙ্গা সাজিয়ে দুর্নীতি মামলার আসামি করা হয়েছে পাঁচ শিশুকে! এদের কারো বয়স পাঁচ, কারো আট, কারো বা দশ। চার পুরুষের জমির খতিয়ান থাকার পরও, দুদকের চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন একই পরিবারের ১৩ জনকে রোহিঙ্গা সাজিয়ে এ মামলা দেন। মামলার পর ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ করে দিয়েছে তাদের সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। বাতিল হয়ে গেছে পাসপোর্ট, জন্মসনদ। অথচ, যারা এসব কাগজপত্র দিয়েছেন তাদের কাউকে আসামি করা হয়নি।

আব্দুর রহমান। কোরআনের হাফেজ। আর ৭ পারা শেষ হলেই হাফেজ উপাধি পাবে তার ছোট ভাই আব্দুস শাকুরও। তাদের বোন হাবিবারও কণ্ঠ বেশ। কিন্তু, কোমলমতি এই শিশুরা জানেই না যে, তারা এখন দুর্নীতির মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য দিয়ে জন্মসনদ ও পাসপোর্ট নেয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে মামলা করেন, দুদকের চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন। অথচ, নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ও পাসপোর্ট প্রদানকারী কাউকে আসামি করা হয়নি।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব বলেন, দুদক কী বুঝে এই মামলার অনুমতি দিয়েছিল তা রিভিউ করা দরকার। নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা বা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তো কোনো অবস্থায়ই এর দায় এড়াতে পারবে না।

মামলায় প্রাপ্ত বয়স্কদের নামের পাশে বয়স থাকলেও এ শিশুদের পাশে কেউই নেই। অথচ, ১৭ আসামির মধ্যে ৫ জনই শিশু।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব আরও বলেন, তাদের নামে যদি সনদপত্র ইস্যু হয়ে থাকে তাহলে তার দায়-দায়িত্ব হবে তার বাবা-মায়ের।

মামলায় বলা হয়, আসামিদের অধিকাংশই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন ল্যাপটপ দিয়ে ভোটার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, তারা অভিযোগ দিয়েছে যে, ২০১৪ সালে নাকি কোথা থেকে কার ল্যাপটপ চুরি হয়েছে সেখান থেকেই নাকি আমরা আইডি কার্ড করিয়েছি।

এ অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আসামি হয়ে যান, কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে, কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, জন্মসনদ-জমির খতিয়ান, পরিবারের সদস্যদের আইডিকার্ড ইত্যাদির ভিত্তিতে অভিযোগ দিয়েছি যে এদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এ তদন্তের পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গায়েব হয়ে যায়, জন্মসনদের বালাম বই। জানতে চাই, গায়েব হলো কীভাবে? জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর ছিদ্দিক বলেন, গায়েব করছে কে এটা তো পাই নাই।

বালাম বই আর মুড়ি যার হেফাজতে ছিল, তার মুখোমুখি হয়েও সন্তোষজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তারা যে বাংলাদেশি সেই প্রমাণ চাইলে, হাফেজ তৈয়ব সামনে হাজির করেন চার পুরুষের জমির খতিয়ান। জমির খতিয়ানগুলো নিয়ে রামু উপজেলা ভূমি অফিসে গেলে তৈয়বের বাবা ও দাদার নামে জমির খতিয়ান থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলো। তার চতুর্থ পূর্বপুরুষ উলা মিয়ারও অস্তিত্ব মিললো জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে।

দুদকে মামলার পর চেয়ারম্যানও স্বীকার করতে চান না, তৈয়বের পরিবার বাংলাদেশি। এজাহারে, বালাম বই গায়েবের জন্য চেয়ারম্যানকে দায়ী করা হলেও আসামি থেকে বাদ পড়ে যান রহস্যজনকভাবে।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে মিসইউজ অব পাওয়ার এবং আমি বলবো এটা মানুষকে হয়রানি করার একটা ক্ল্যাসিক কেস।

হঠাৎ কেনো তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গার অভিযোগ? জানতে চাওয়া হলে ভুক্তভোগী হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়ব বলেন, আমার ছোট ভাই একটা আছে। ও নির্বাচন করতে চেয়েছিল। যেহেতু নির্বাচন করলে চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাবে। উনিই আমাদেরকে রোহিঙ্গা বানিয়েছেন, ওনার নাম বশির আহমদ।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতেন শরীফ উদ্দীন। প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার বশির আহম্মদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ভাতিজা নজরুল থাকেন, সৌদি আরবের মক্কায়। শরীফ উদ্দীন ওমরা করতে গিয়ে সেই নজরুলের সাথেও সাক্ষাৎ করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, শরীফ উদ্দীনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply