জীবনের মায়া ত্যাগ করে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা, নেই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও

|

তুরস্ক-সিরিয়ার প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পের পর থেকেই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি উদ্ধারকর্মীরা। দম ফেলারও সময় নেই তাদের। উদ্ধারকাজের সময় একাধিকবার ঘটছে দুর্ঘটনাও। তাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ধ্বংসস্তূপের মাঝে প্রাণের সন্ধান করে যাচ্ছেন তারা। যারা বেঁচে নেই, তাদের মরদেহ পৌঁছে দিচ্ছেন স্বজনদের কাছে। খবর বিবিসির।

তীব্র শীত, বৃষ্টি আর সরঞ্জামের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। এখনও হালকা যন্ত্রপাতি দিয়েই হতাহতদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে। কখনও কান পেতে জীবিতদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছেন উদ্ধারকারীরা। সেইসাথে হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সতর্কতার সাথে চলছে অনুসন্ধান। যদিও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে।

অকল্পণীয় এ দুঃসময়ে পাশে আছে ধর্ম, মতাদর্শ আর কূটনৈতিক সম্পর্ককে পেছনে ফেলে মানবতাই প্রধান হয়ে উঠেছে। একাধিক দেশ থেকে সিরিয়া ও তুরস্কে পাঠানো হয়েছে সাহায্য ও উদ্ধারকর্মীদের। সেখানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আপনজনদের সাথে কাজের ব্যস্ততায় মুঠোফোনে অল্প-বিস্তর যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছেন এসব অদম্য সাহসী যোদ্ধারা।

তুরস্কে এভাবেই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন আব্দেল রহমান নামের এক স্বেচ্ছাসেবক। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পর থেকেই টানা কাজ করছি। আল্লাহকে ধন্যবাদ, তিনি আমাদের এই শক্তি দিয়েছেন। যখনই কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া স্বজনকে খুঁজে পেতে আমাদের কাছে সহায়তা চায় তখন আমরা তাদের খোঁজা শুরু করি। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি এই জায়াগায় আছি। আমার পরিবার কেমন আছে সে খবর নেয়ার সময়ও পাচ্ছি না।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের স্বল্পতার পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। ধ্বংসস্তূপের পাশে হাজার হাজার মানুষের চিৎকার-আহজারি উপেক্ষা করেই কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। একেকজন উদ্ধারকর্মী যেনো পরিণত হয়েছেন একেকটি রোবটে।

আব্দেল রহমান বলেন, আমাদের কাছে ধর্ম-বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাইকেই সহায়তা করছি আমরা। মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা কুর্দি যেই হোক না কেনো, আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসলে কাউকেই ফিরে যেতে হবে না।

প্রতিনিয়ত অনেক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনছেন একের পর এক মরদেহ, সাক্ষী হচ্ছেন হৃদয় বিদারক অনেক গল্পের। গুরুতর আহত অনেকের মৃত্যু হচ্ছে চোখের সামনেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ধকল সামলাতে না পেরে উদ্ধারকর্মীদের অনেকেই ভুগতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যায়।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply