কিংবদন্তী অভিনেতা হুমায়ুন কামরুল ইসলাম। নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ- সবখানেই ছিল যার অবাধ বিচরণ। ২০১২ সালের আজকের এ দিনে ফাগুনের রঙে বিষাদ ছড়িয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। মৃত্যুর এতোদিন পরও প্রিয় অভিনেতা হিসেবে ভক্তদের মনে ফরিদী এখনও জীবিত।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্ম নেয়া ফরীদি চার ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে। কিন্তু, পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম রেখে হাতে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়ে স্বাধীন করেন দেশ।
স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক পড়তে শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল। অর্থনীতির খটমটে তত্ত্ব বাদ দিয়ে সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বের দীক্ষা নেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এ নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙ।
নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ- সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। মঞ্চ দিয়েই তার শুরু। ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’-এর মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। আদায় করে নেন দর্শকের ভালোবাসা। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু রাজধানীতে নয়, বিভিন্ন জেলার মঞ্চেও অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।
মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রেও স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে নেন ফরীদি। ১৯৮০ সালে ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এর মাধ্যমে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয় তার। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।
ফরীদির নাট্যাভিনয় থেকে চলচ্চিত্রে আসা ছিল অনেকটা নাটকীয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের তখনকার বেহাল অবস্থা দেখে, রূপালি পর্দার জন্য কাজ করবেন কি না এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। নব্বই দশকে ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’র মতো বাণিজ্যিক সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরেই দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্যমাত্রা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, একসময় মানুষ নায়কের পরিবর্তে তাকে দেখার জন্যই প্রেক্ষাগৃহে যেতো।
দহন, একাত্তরের যিশু, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া, ও আহা!’র মতো সিনেমায় অভিনয় করে এ দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন ফরিদী। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। আর, ২০১৮ সালে পেয়েছেন মরোণোত্তর একুশে পদক।
জাত অভিনেতা ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। টানা তিন দশক তার ম্যাজিকাল অভিনয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন পুরো বাঙালি জাতিকে। সবার প্রিয় অভিনেতা হিসেবে এখনও আবিষ্ট করে রেখেছেন অগুনতি দর্শক-সমালোচকদের।
/এসএইচ
Leave a reply