ইতিহাসের অমর জুটি

|

প্রেম মানে না জাতি ধর্ম, প্রেম মানে না সমাজ, তাই প্রেমের টানে ইতিহাসের শুরু থেকেই পৃথিবীতে ঘটেছে অবিস্মরণীয় সব ঘটনা। প্রেমের টানে সিংহাসন ছেড়ে পথিক হয়ে গেছেন কেউ কেউ। কেউ বা আবার প্রেমের টানেই আপন করে নিয়েছেন পৃথিবীর সব দুঃখ কষ্ট।

ভালোবাসার অপর নাম যেনো রোমিও-জুলিয়েট। বিশ্বখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী ট্রাজেডি। যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে তাদের বিয়োগান্ত প্রেম কাহিনী। তরুণ এ যুগলের ভালবাসার জন্য মৃত্যুবরণ আজও মানুষকে একই আবেগে নাড়া দেয়।

গ্রিক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ, গ্রিকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক ‘ইলিয়ড’। সেখানে উল্লেখিত বিখ্যাত যুদ্ধ, ‘Trojan War’ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল ঐতিহাসিক শহর- ট্রয়! পৃথিবীর সেরা সুন্দরী হেলেনের জন্য যে এতো কিছু, তাকে তার ভালোবাসার মানুষ প্যারিস কাছে পেয়েছিল কি না তা আজও অজানা। প্রেমের জন্য এতো রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।

এদিকে, মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী, তার কবিতা লায়লি-মজনুর জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আরব মিথ ‘লায়লা-মজনু’ অবলম্বনে অধরা প্রেমের এক বিয়োগন্তক গাঁথা রচনা করেন তিনি। প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে।

মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম ওরফে জাহাঙ্গীর প্রেমে পড়েন অনিন্দ্য সুন্দরী নর্তকী আনারকলির। সম্রাট আকবর এ সম্পর্ক কখনই মেনে নেননি। এমনকি নিজ সন্তানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। প্রিয়তমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। তবে সেলিমের চোখের সামনে আনারকলিকেই জ্যান্ত কবর দেয়া হয়।

১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামের এক বালিকার সঙ্গে বিয়ে হয় আরেক মুঘল রাজপুত্র শাহজাহানের। যিনি পরে মোঘল সম্রাট হয়েছিলেন। সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজমহল। মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন শাহজাহান। তবে, সে অনিন্দ্য সুন্দর সাদা মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি দেখেছেন খুবই কম সময়। মৃত্যুর পর তাকেও সেখানে সমাহিত করা হয়। তার ভালোবাসার নিদর্শন তিনি রেখে যান। পৃথিবীর সপ্তাচর্যের মাঝে একটি ‘তাজমহল’।

প্রেম শাশ্বত। যুগে যুগে নর-নারীর মাঝে প্রেম এসেছে, জন্ম দিয়েছে নানা কিংবদন্তীর। সাহিত্য বা চলচ্চিত্রে আমরা প্রেমের নানা উপাখ্যান দেখতে পাই। এগুলো কতটুক সত্য তা নিয়ে হয়তো বিতর্ক আছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে ভালোবাসার অসাধারণ সব নজির যে আমাদের চারপাশেই রয়েছে তা সবাই এক বাক্যেই মেনে নিবে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply