রবীন্দ্রনাথের মুখ বাঁধা ভাস্কর্যটি সরিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষই; যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রক্টর

|

রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে স্থাপিত রবি ঠাকুরের ভাষ্কর্য (বামে)। ডানের ছবিটি ভাষ্কর্য অপসারণের পর তোলা।

সাদিক গালিব:

‘সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে’ বইমেলার প্রবেশমুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চারুকলার একদল শিক্ষার্থী সম্প্রতি একটি প্রতিবাদী ভাস্কর্য স্থাপন করে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছিল। কিন্তু দু’দিন না যেতেই সেটি সরিয়ে ফেলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ভাস্কর্যটিতে ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করা হয়েছিলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে; ভাস্কর্যটির মুখ ছিল নীল রঙের টেপে বাঁধা। আর, তার হাতে থাকা কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলিতে ঠোকা ছিল পেরেক। সেটি সরিয়ে ফেলায় রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। যেখানে লেখা ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’।

ভাস্কর্য নির্মাণের সাথে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা শিমুল কুম্ভকার জানান, ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভাস্কর্যটি সেখানে রাখার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু, বৃহস্পতিবার কে বা কারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী স্যারকে ফোন দিলে উনি প্রথমে জানান যে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পরে আবারও যোগাযোগ করা হলে জানতে পারি ‘অপসংস্কৃতির’ দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ভাস্কর্যটি সরিয়েছে। প্রক্টরের বক্তব্য শুনে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।

ভাস্কর্যটি কেনো সরানো হলো? তা জানতে ফোন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. গোলাম রব্বানীকে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া আমাদের ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে যে ভাস্কর্যটি আছে সেটির পাদদেশে কে বা কারা গোপনে কাজটি করে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার একটি নীতিমালা আছে। ভাস্কর্য স্থাপনের ব্যাপারেও আমাদের কিছু প্রক্রিয়া আছে।

তিনি জানান, এর আগেও একটি জায়গায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করতে চেয়েছিল কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু, আমরা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেই ওই ভাস্কর্যটি ওখানে স্থাপন না করতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছি। ওরা দু’বার এসেছিল। ওদেরকে দুইবারই ফিরিয়ে দিয়েছি। ভাস্কর্যের মতো বিশেষ কিছু স্থাপনের আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নিতে হয়।

‘অপসংস্কৃতি’র ব্যাখ্যায় প্রক্টর বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, ওরা ভাস্কর্য স্থাপন করলে সেখানকার দুটি ভাস্কর্যের সৌন্দর্যই বিনষ্ট হতো। ভাস্কর্যের যে সংস্কৃতি ও সম্মান সেটির অপমান করা হয়েছে। আমাদের কবিগুরু, বিশ্বকবি এবং বাংলা সাহিত্যের পুরোধাকে এভাবে স্থাপন করাটা নিঃসন্দেহে অপসংস্কৃতি। কেউ এই অপসংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে গোপনে। রবি ঠাকুরের যে সম্মানবোধ অর্থাৎ তাকে কীভাবে স্থাপন করতে হবে সেটিওর একটি নান্দনিকতা আছে। এটিকেই আমি অপসংস্কৃতি বলছি। এটি আমাদের শিক্ষার্থীরা করে থাকলে তাদেরকে পরামর্শ দেবো যেনো তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর না করে।

অনেকেই না বুঝে প্রতিবাদ করছে উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, বিশ্বকবি নাকি গুম হয়ে গেছেন, এ ধরনের বক্তব্য আসলে হীন চিন্তার প্রতিফলন। হীন উদ্দেশ্যেই এগুলো করা হচ্ছে। কোনো ভালো ও ইতিবাচক চিন্তা ও উদ্দেশ্য থাকলে আমাদের কাছে আসবে, বলবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে যে এটা সর্বদিক থেকে ভাল তাহলে কর্তৃপক্ষ সেটি ভাববে। এভাবেই তো এখানে এতো এতো ভাস্কর্য হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্থাপন করা হয় রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যটি। এটি নির্মাণের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছিলাম যা মানুষকে কথা বলতে এবং আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুক্ত চিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রতীক, এবং এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এই মূল্যবোধগুলি আমাদের সমাজের জন্য অপরিহার্য।


/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply