গানে গানে প্রতিশোধ

|

ইন্টারনেট থেকে নেয়া ছবি।

প্রাক্তনের প্রতি ক্ষোভ থেকে গান রচনা নতুন কিছু নয়। প্রেমে প্রতারণার শিকার হয়ে কিংবা বিচ্ছেদের পর, বহু শিল্পীই মনের যন্ত্রণা থেকে এমন অনেক গান লিখেছেন ও গেয়েছেন, যেগুলো পরবর্তীতে অনবদ্য সৃষ্টি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ‘সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রতিশোধ’ নিয়ে, তারা গানের মাধ্যমে বিশ্বকে জানিয়েছেন নিজের কষ্টের কথা। এসব ক্ষেত্রে নারী সঙ্গীতশিল্পীদের গান তুলনামূলক বেশি পরিচিতি পেলেও, পুরুষ শিল্পীরাও বাদ যাননি ‘গানে গানে প্রতিশোধ’ নেয়া থেকে।

১৯৯৫ সালে ‘ইউ অটা নো’ দিয়ে সঙ্গীত জগতে ব্যাপক খ্যাতি পান কানাডিয়ান-আমেরিকান গায়িকা অ্যালানিস মরিসেট। একাধিক সাক্ষাৎকারে অ্যালানিস জানিয়েছেন, সাবেক প্রেমিকেরকাছে প্রতারণার শিকার হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। এরপরই এই গান দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করেন তিনি।

যদিও অ্যালানিস কখনও প্রকাশ্যে তার সেই প্রাক্তনের নাম উচ্চারণ করেননি, তবে ধারণা করা হয় যে, তার তৎকালীন প্রেমিক অভিনেতা ডেভ কুলিয়ারই সেই ব্যক্তি হতে পারেন। বিশ্বজুড়ে ৩৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় অ্যালবামটির। প্রিয় মানুষের কাছে প্রতারিত হবার যে তিক্ত অনুভূতি, তার স্বাদ বিশ্বের লাখ লাখ নারী পেয়েছেন- অ্যালানিসের গানের সাথে শ্রোতারা একাত্ম হতে পেরেছিলেন বলেই।

১৯৬৭ সালে আমেরিকান গায়িকা ও গীতিকার অ্যারেথা ফ্রাংকলিন নারী শ্রোতাদের এমন একটি গান উপহার দেন, যেখানে তারা আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে চলতে অনুপ্রাণিত হন। কিন্তু এ ‘নারীবাদী’ গানের রচয়িতা ছিলেন ওটিস রেডিং নামের এক পুরুষ গীতিকার। রেডিং গানটি লিখেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন তিনি তার স্ত্রীর ওপর চরম বিরক্ত ছিলেন। রেডিং এর ভাষ্যে- তার স্ত্রী তাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন না।

পুরুষরাও যে প্রেমঘটিত যন্ত্রণা থেকে গান রচনা করেননি তা নয়। জাস্টিন টিম্বারলেক তার ‘ক্রাই মি আ রিভার’ গানটি গেয়েছিলেন তার প্রাক্তন ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে উদ্দেশ্য করে। ২০১২ সালে এক কনসার্টে এই গান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মাঝেমাঝে মনে হবে, আপনি ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে গেছেন, এরপর হঠাৎ উপলব্ধি করবেন- সে একটা বাজে মানুষ ছাড়া কিছুই ছিল না।

এদিকে রোলিং স্টোনসের ‘মেলোডি’ গানটি রীতিমতো প্রাক্তনের প্রতি ঘৃণায় পরিপূর্ণ। এমন গান লেখার পেছনেও ছিল হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণার গল্প। সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ অ্যানাবেল ভেলেজ বলেছেন, বব ডিলানের ‘ব্লাড অন দ্য ট্র্যাকস’ অ্যালবামের পুরোটাই ছিল ‘বিচ্ছেদ নিয়ে’।

সম্প্রতি শাকিরা তার ‘ডিস ট্র্যাক’ গান দিয়ে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণার কথা। শাকিরার প্রতি পিকের বিশ্বাসঘাতকতা গানের প্রতিটি কথায় প্রকাশ পেয়েছে। শুরু থেকেই বলা হচ্ছিলো, পিকে-শাকিরার বিচ্ছেদের পেছনে তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে। শাকিরার গানের মধ্যেও স্পষ্ট যে, অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন পিকে। যদিও স্প্যানিশ ফুটবলার এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন এখনও।

তবে, এত এত প্রেমে ব্যর্থতা কিংবা রেষারেষির পরও অনেক তারকাই প্রাক্তনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। কে জানে হয়তো জীবনের কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে আবারও একে অপরকে চাইতেও পারেন তারা। তবে কিছু মানুষ থাকেই যারা পুনর্মিলনকে গ্রহণ করতে পারেন না, বরং একবার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলে সেটিই হৃদয়ে গেঁথে রাখেন এবং সুযোগ পেলে এমন গানের মাধ্যমে প্রতিশোধও নেন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply