রাজধানীর দুর্ধর্ষ দুই গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডে তালা কেটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোকান সাবাড় করে চলে যেতো তারা। সাত বছরে রাজধানীজুড়ে দেড় শতাধিক চুরি করে এই জ্যাক-জামাল জুটি।
শুক্রবার (৩ মার্চ) দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার জাফরাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চুরির সরঞ্জামসহ উদ্ধার করা হয় একটি পিকআপ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, মো. জাকির হোসেন ওরফে জ্যাক (৪৪) ও মো. নূর জামাল ওরফে জামাল (২৬)। তবে তারা দু’জন জ্যাক-জামাল নামেই পরিচিত।
২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর বড়বাগ পলিভিটা বেকারি এলাকায় ‘নিউ মিউজিক এশিয়া’ নামের দোকান থেকে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে আসে জ্যাক-জামালের নাম। সংঘটিত সেই চুরিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৩টি মোবাইল সেট, একটি ল্যাপটপ, ২০টি মেমোরি কার্ড, ৫০০টি রিচার্জ কার্ড, নগদ অর্থসহ আনুমানিক এক লাখ ৫২ হাজার ৭৭৫ টাকার মালামাল চুরি করে এই চোরজুটি। দুর্ধর্ষ সেই চুরির দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করা হয় এবং শুক্রবার দুপুরে নগরীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় সোহেল (৩৫) নামের আরেকজনকে। সোহেল জ্যাক-জামালের কাছ থেকে চুরি করা মালামাল কিনতো।
পুলিশি তদন্তে জানা যায়, দুর্ধর্ষ জ্যাক-জামাল সাত বছরে দেড় শতাধিক চুরি করেছে। এই চুরির টাকায় পিকআপ কেনে তারা। পিকআপে চড়েই চুরি করে বেড়াত তারা। গাড়ি কেনার আগে কয়েক রাতে একটি চুরি করলেও, কেনার পর এক রাতে চারটি পর্যন্ত চুরি করে তারা! পরে এই পিকআপে করেই চুরির মালামাল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। চুরির টাকায় চুরির জন্য তারা শুধু গাড়িই কেনেনি, আলাদা বাসাও ভাড়া করেছে! সব মালামাল একসাথে বিক্রি করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে তাই ওই বাসাকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে সেখানেই চুরির মালামাল রাখত তারা।
জ্যাক-জামাল চুরি করতে বের হতো রাত দুইটায়। চুরি করে বাসায় ফিরতো ৬টায়। দুইজনের মধ্যে জ্যাক গ্রিল ও তালা কাটতো। গ্রিল কিংবা তালা কাটতে তার সময় লাগে সর্বোচ্চ চার সেকেন্ড। কাটার পর দোকানে ঢুকে মালামাল চুরি করতো জামাল। তার পুরো চুরি করতে সময় লাগতো মাত্র চার মিনিট! এক রাতেই তারা কয়েকটি দোকান চুরি করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এক রাতে তারা সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত চুরি করেছে।
পুলিশি তদন্তে আরও জানা যায়, জ্যাক-জামালের মূল টার্গেট ছোট ছোট দোকান। সাধারণত রাস্তার ওপর থাকা ছোট ছোট পান-সিগারেটের, মোবাইল রিচার্জের, মুদির দোকানই টার্গেট করে তারা। কারণ, এসব দোকানদার সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের হয়। তাই চুরি করলেও তারা মামলা করে না। এ কারণেই দেড় শতাধিক চুরি করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা খুবই কম।
এটিএম/
Leave a reply