পরিবারকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড, ২০ বছর কনডেম সেলে থাকার পর আদালতের রায়, ‘নির্দোষ’

|

নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় জাহিদ শেখকে। এরপরই নিয়ম অনুযায়ী তাকে রাখা হয় কনডেম সেলে। তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন তিনি। ২০ বছর কনডেম সেলে কাটার পর অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন ৫২ বছরের জাহিদ শেখ। নির্দোষ হয়েও জীবনের ২০টি বছর ছিলেন অন্ধাকার কনডেম সেলে। অবশেষে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে পারছেন জাহিদ।

কনডেম সেলে কাটানো ২০টি বছরের দুর্বিষহ জীবনের কথা ভুলতে পারছেন না জাহিদ। নির্দোষ হয়েও জীবদ্দশাতেই পেয়েছেন যেন নরকের স্বাদ। জাহিদ বলেন, কনডেম সেলে থাকাকালীন যে খাবার দেয়া হতো তাতে পোকা ভেসে উঠতো। ডাল দেয়ার কিছুক্ষণ পর সাদা সাদা পোকা ভেসে উঠতো তার মধ্যে। সেই সময় কয়েদিদের জন্য টুপি চালু ছিল। সেই টুপি দিয়ে ডাল ছেকে ভাত খেয়েছি।

ছোট্ট কনডেম সেলের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াও যেন এক বিলাসিতা। জাহিদ বলেন, সেলের ভেন্টিলেটারগুলো হয় খুবই ছোট। নিশ্বাস নেয়া কষ্ট। মাঝে মধ্যে দম আটকে যেতো। সেই সময় দরজার কাছে মুখ বাড়িয়ে নিশ্বাস নিতাম।

বাঁচার আর কোনো আশা ছিল না জাহিদের, মৃত্যুর জন্যই ছিল অপেক্ষা। কনডেম সেলে থেকেই দেখা যেত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দৃশ্য। সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে জাহিদ বলেন, আমার সামনে থেকে এক আসামিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে জম টুপি পরিয়ে নেয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। কলেমা পড়তে পড়তে যেতো সেই আসামি। এরপরই তাকে ঝুলিয়ে দেয়া ফাঁসিতে। আমি সেটা নিজের চোখে দেখছি। সেই সময় আমিও ভাবতাম, আমাকেও হয়তো এভাবেই ঝুলিয়ে দেয়া হবে। মনে মনে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করতাম।

স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে হত্যার অভিযোগে শ্বশুরের করা মামলায় ২০ বছর সাজা কেটে অবশেষে নির্দোষ প্রমাণ হন জাহিদ শেখ। কিন্তু কে হত্যা করলো তার প্রিয়জনদের জানতে চান সেই রহস্য। একইসাথে জীবনের হারিয়ে যাওয়া ২০টি বছরের ক্ষতিপূরণ চাইছেন সরকারের কাছে।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply