ফরিদপুরে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়ছে সহিংসতা

|

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরে ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্বাচনী পরিস্থিতি। প্রতিদিনই নির্বাচনী হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে সহিংস ঘটনার ব্যাপ্তি বেড়েছে।

আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ফরিদপুর সদরের ১১টি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও
প্রার্থীর ভাইকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করা, প্রার্থীর নির্বাচনী বহরে হামলা চালিয়ে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর এবং প্রার্থীর এজেন্টদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি ধমকি দেয়ার বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটা হতে রাত ৩টা পর্যন্ত সদরের কানাইপুর, কৈজুরি, ডিক্রিরচর, মাচ্চরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ ঘটনাগুলি ঘটেছে।

কানাইপুর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সহ আমার কয়েকজন সমর্থক গত সোমবার দিবাগত রাতে ফরিদপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। রাত আনুমানিক ২টার দিকে ভাটি কানাইপুর এলাকার মাদরাসার পাশ দিয়ে ভ্যানযোগে যাচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকজনকে আমার নৌকা মার্কার পোস্টার ছিঁড়তে দেখলে তাদের আমরা বাধা দেই। তাদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়। আমার ভাই চঞ্চল ইসলাম ও সুমনকে জখম করা হয়।

তিনি বলেন, আহত সবাইকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমি নির্বাচন কমিশন বরাবরও অভিযোগ দিবো।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সমর্থকদের হাতে। গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কৈজুরী ইউনিয়নের ব্যাঙডোবা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ জানান, তাম্বুলখানা এলাকায় প্রচারণা কাজ শেষ করে ঘোড়াদহ এলাকায়
যাওয়ার পথে ব্যাঙডোবা ও বেতবাড়িয়া মোড় এলাকায় তিনি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা নিয়ে পৌঁছালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। কোতোয়ালী থানা শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

হামলাকারীরা তার দুটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় তার ১০ জন কর্মী আহত হন এবং তিনি নিজেও আঘাত পান। পরে তারা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

কোতোয়ালী থানা শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান বলেন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ যে অভিযোগ করেছেন তার সাথে তিনি জড়িত নন।

এদিকে সোমবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডিক্রিরচর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসানের বেশ কিছু নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ- আওয়ামী লীগে প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।

মেহেদী হাসান বলেন, মুন্সীডাঙ্গী, ধলার মোড়, বালু ফকিরের ডাঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরা আমার নির্বাচনী ক্যাম্পগুলি ভাঙচুর
করেছে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার সমর্থক ও কর্মীদের ধাওয়া করেছে।

মাচ্চর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ মুন্সী অভিযোগ করে বলেন, বেশকিছু মোটরসাইকেল নিয়ে হেলমেট পরিহিত ব্যক্তিরা মাচ্চর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে অভিযান চালিয়ে নৌকার
সমর্থকরা আমার ভোটারদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হুমকি দেয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। সোমবার রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ তাণ্ডব চলে।

অম্বিকাপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নূরুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে জানান, আমার কর্মী ও নির্বাচনী এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। সোমবার দিবাগত রাতে নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে নৌকা নৌকা শ্লোগান দেয় নৌকার সমর্থকরা। আমাকে কোথাও ভোট চাইতে নামতে দেয় নাই।

ফরিদপুর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, সদরের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বেশ কিছু অভিযোগ স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেয়া হয়েছে। এগুলো তদন্ত করে দেখার জন্য ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, প্রতিটি অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের নতুন চারটি টহল দল গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে দ্রুত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ মার্চ সোমবার ফরিদপুর সদরের ১১টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইভিএম পদ্ধতিতে এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply