আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানায় রুশ প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা সম্ভব নয়। তবে এ পরোয়ানায় ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে রাশিয়া- এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি, প্রশ্নবিদ্ধ করবে সুপার পাওয়ার দেশটির গ্রহণযোগ্যতাকে। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতে সফর করাও কঠিন হয়ে উঠবে পুতিনের জন্য।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই আলোচনা চলছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যাপারে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, রুশ সেনারা ইউক্রেনের নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা, অত্যাচারসহ শিশুদের বাস্তুচ্যুত করেছে। যা মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরোয়ানা জারি করা হলেও পুতিনকে গ্রেফতারের কোনো সুযোগ দেখছেন না তারা। ক্ষমতার পতন হলে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন পুতিন, তবে দেশটির বিরোধী দলের যে অবস্থান তাতে সে সম্ভাবনাও খুব একটা নেই। একই চিত্র দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও।
এ প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেখট ইউনিভার্সিটির খ্যাতনামা রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ইভা ভ্যাকাসিক বলেন,
এটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে এ ধরনের পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে গেলেও খুব দ্রুত বাস্তবায়ন হয় না। কখনো কখনো কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয়। আর পুতিন কোনো নির্বোধ ব্যক্তি নন। তিনি জানেন যে কোন কোন দেশে গেলে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। তাই সেসব দেশ সফর করা তিনি এড়িয়ে চলবেন। ফলে এটা স্পষ্ট যে পুতিন ও তার শীর্ষ কর্মকর্তারা কেউই গ্রেফতার হচ্ছেন না।
তবে প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে এ পরোয়ানা জারির উদ্দেশ্য কি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এ পরোয়ানা জারি। সুপার পাওয়ার একটি দেশের প্রধানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হলে নিশ্চিতভাবেই সে দেশের ইমেজ সংকটে পড়ে, প্রশ্নবিদ্ধ হয় গ্রহণযোগ্যতা। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পশ্চিম কিংবা ইউরোপের কোনো দেশে সফর করা কঠিন হয়ে উঠবে পুতিনের জন্য। ফলে জি-সেভেন, জি-টুয়েন্টি কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশ নেয়াও কঠিন হবে তার জন্য।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধিভূক্ত ওয়াশিংটন স্কুল অব ল এর অধ্যাপক রেবেকা হ্যামিলটন এ প্রসঙ্গে বলেন,
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়- এই শক্ত বার্তা দিতেই এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইসিসির মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার ইমেজকে সংকটে ফেলা। এর পাশাপাশি বিশ্বের কাছে পুতিনের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও এ সিদ্ধান্তের একটি অংশ। রুশ বর্বরতার শিকার ইউক্রেনবাসীকে এটাও স্পষ্ট করা হলো যে বিশ্ববাসী তাদের পাশে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ২০০৯ সালে সুদানের সাবেক শাসক ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তা স্বত্বেও বেশ কয়েকটি দেশে নির্বিঘ্নে সফর করেছেন ওমর আল বশির।
/এসএইচ
Leave a reply