সেঞ্চুরিয়ানে রেকর্ডময় এক ম্যাচ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। টি-টোয়েন্টিতে ২৫৮ রান করেও রেহাই পেলো না উইন্ডিজ। ৭ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এই জয়ে সিরিজে এখন ১-১ সমতা।
আগের ম্যাচ থেকেই আভাস মিলছিল হাই-স্কোরিং রানের। যেখানে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খায় ক্যারিবীয়রা। ইনিংসের ৩য় বলেই সাজঘরে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। কিন্তু এরপরই ম্যাচের চিত্র বদলে দেন জনসন চার্লস আর কাইল মায়ার্স। ২য় উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে ১৩৫ রান করে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত এনে দেন এই দুই ব্যাটার।
২৭ বলে ৫টি চার আর ৪টি ছয়ের সাহায্যে ৫১ রান করে আউট হন মায়ার্স। মার্কো ইয়ানসেনের বলে কাইল মায়ার্স বোল্ড হবার সময় দলের রান ছিল ১৩৭। একই ওভারে ইয়ানসেন নিকোলাস পুরানকে ফেরালে কিছুটা আশার আলো দেখেছিল স্বাগতিকরা।
কিন্তু তখনো ক্রিজে ছিলেন জনসন চার্লস। ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করে ক্যারিবীয়দের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি। এর আগের রেকর্ডটির মালিক ছিলেন ‘ইউনিভার্সেল বস’ ক্রিস গেইল। ৪৭ বলে একশ’ করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় চলে এসেছেন জনসন চার্লস। ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে সবার উপরে আছেন ডেভিড মিলার, রোহিত শর্মা ও বিক্রমাসেকেরা। এরপর ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করাদের তালিকায় চার্লসের সাথে আছেন রোমানিয়ার পেরিয়ালওয়ার এবং হাঙ্গেরিয়ার জিশান কুকিখেল।
সেঞ্চুরি করে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন চার্লস। তবে ১১৮ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ইয়ানসেনের বলে বোল্ড হবার আগে ১১টি ছক্কা আর ১০টি চার মেরেছেন এই বিধ্বংসী ব্যাটার।
এরপর অধিনায়ক রাভম্যান পাওয়েলের ১৯ বলে ২৮ রানে দুইশ’র কোটা পার করে উইন্ডিজ। শেষ দিকে রোমারিও শেফার্ডের ১৮ বলে অপরাজিত ৪১ আর স্মিথের ৫ বলে অপরাজিত ১১ রানে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস। সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্টস পার্ক মাঠে টি-টোয়েন্টিতে এটিই সর্বোচ্চ স্কোর। প্রোটিয়াদের হয়ে ইয়ানসেন ৩টি আর পারনেল নিয়েছেন ২টি উইকেট।
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল বুলগেরিয়ার। ২০২২ সালে সার্বিয়ার বিপক্ষে ২৪৬ রান করে জয় তুলে নেয় আইসিসির সহযোগী এই দেশ। তবে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল অজিরা।
বিশাল সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিং শুরু করে প্রোটিয়ারা। ৬৫ বলে ১৫২ রানের জুটি গড়ে স্বাগতিকদের জয়ের পথেই রাখেন কুইন্টন ডি কক আর রেজা হ্যান্ড্রিক্স। জনসনের সেঞ্চুরির জবাবে সেঞ্চুরি করে কঠিন উত্তর দেন ডি কক। তবে তিন অংকের কোটায় পৌঁছেই আউট হন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৪৪ বল খেলে ফেরা ডি কক হাঁকিয়েছেন ৯টি চার আর ৮টি ছয়ের মার।
১২তম ওভারের শেষ বলে দলের আরেক হার্ড হিটার রাইলি রুশো আউট হবার সময় দলের রান তখন ১৮০। ৪ বলের শেষটিতে আউট হবার আগে বাকি ৩ বলে মেরেছেন ২টি ছয় আর ১টি চার।
ক্রিজে থাকা আরেক ওপেনার হ্যান্ড্রিক্স পরের ওভারে আউট হলেও আগেই কাজের কাজটি করে ফেলেন। ২৮ বলে ৬৮ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ২৫৯ রানের লক্ষ্যকেও মামুলি বানিয়ে ফেলেন তিনি। যেখানে ছিল ১১টি চারের মার আর ২টি ছক্কা।
দলীয় ২১৬ রানে ডেভিড মিলার আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে কোনো প্রভাব পড়েনি। ৫ম উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মার্করাম আর হেনরিচ ক্লাসেনের হার না মানা ১৯ বলে ৪৩ রানে ৬ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা। ২১ বলে ৩৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন মার্করাম আর ক্লাসেনের ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে হার না মানা ১৬ রান।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন প্রোটিয়া ব্যাটার কুইন্টন ডি কক। সিরিজ নির্ধারনী শেষ টি-টোয়েন্টিতে মঙ্গলবার জোহান্সেবার্গে মুখোমুখি হবে দুই দল।
এ এইচ/ইউএইচ/
Leave a reply