বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে এরকম মাধুর্য্য হয়তো এর আগে দেখা যায়নি। মাঠে নামা পাঁচ ব্যাটারের সবার স্ট্রাইক রেটই দেড়শোর বেশি। ২০২ স্ট্রাইক রেট সবার উপরে আছেন লিটন দাস। বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড এই ম্যাচে নতুন করে লেখা এই উইকেটকিপার ব্যাটারের দেখানো পথেই হেঁটেছে বাকিরা। রনি তালুকদার, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটও তলোয়ার হয়ে আঘাত হেনেছে আইরিশ বোলারদের উপর। বৃষ্টির পর নির্ধারিত ১৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের দাঁড় করিয়েছে ৩ উইকেটে ২০২ রানের বিশাল সংগ্রহ।
আইরিশদের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দুইশো পেরোনো স্কোর করেছিল বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ সংগ্রহ সেদিন হয়নি বলে বৃষ্টির প্রতি অভিমান হতে পারে টাইগার সমর্থকদের। দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলা হয়েছে ৩ ওভার কম। তবুও বলা যায়, সেই রেকর্ড আজও হতে পারতো। পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হয়নি কার্টেল ওভারের কারণে। আফসোসের কথা ভাবলে লিটন দাসও আসবেন তালিকায়। এই স্টাইলিশ ব্যাটারের ৪১ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটি সেঞ্চুরিতে রূপান্তরিত হয়নি বলে আক্ষেপ কাজ করতেই পারে। টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি রনি তালুকদার।
তবে, আইরিশদের সামনে টপকানোর জন্য একটি বিশাল পাহাড় রেখেও এসব আফসোস জানান দেয়, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বাংলাদেশের ক্রিকেট হয়তো প্রবেশ করেছে প্রত্যাশিত চেহারায়। যেখানে শেষ হয়েছিল প্রথম ম্যাচ, দ্বিটিয়টি শুরু হয়েছে যেন সেখান থেকেই। কয়েক দফা বৃষ্টির পর শুরু হয় খেলা, শুরু হয় লিটন দাসের ঝড়। আয়ারল্যান্ড বোলারদের তুলোধুনো করে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন লিটন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন রনি তালুকদার। দু’জনের আক্রমণাত্মক ব্যাটে পাওয়ার প্লের ৫ ওভারেই ৭৩ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। সেই সাথে এসেছে একগাদা রেকর্ড। লিটন-রনির মারমুখী ব্যাটিংয়ে কেবল বোলিং অ্যাটাকই দিশেহারা হয়নি আইরিশদের, সাথে দেখা গেছে মিস ফিল্ডিংয়ের ফুলঝুরি।
বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজে টিকে থাকতে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। মাত্র ৩.৩ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেছে স্বাগতিকরা। এটিই দ্রুততম দলীয় পঞ্চাশ। এর আগে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৫০ করেছিল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়ে লিটন গড়েন বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। লিটন হাঁকিয়েছেন ১৮ বলে অর্ধশতক, যা বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। এর আগে ২০ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
বল ফেলার যেন জায়গা পাচ্ছেন না আইরিশ বোলাররা। লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ব্যাট থেকে আসছে একের পর এক বাউন্ডারি। লিটন ও রনির ঝড়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের সেরা জুটি। ৮ ওভার শেষে রান ১০৭। এই সংস্করণে আগের সেরা জুটি ছিল ১০২ রানের। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গড়েছিলেন মোহাম্মদ নাইম শেখ ও সৌম্য সরকার। বেন হোয়াইটের বলে আউট হওয়ার আগে গত ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় রনি তালুকদার করেন ২৩ বলে ৪৪ রান। তার ইনিংসে ছিল ৩টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারি।
এরপর, অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তারা করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। ৪১ বলে ৮৩ রানের ইনিংসে তিনি হাঁকিয়েছেন ১০টি চার ও ৩টি ছয়। তবে, রানের জোয়াড়ে বাধ দিতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাকিব আল হাসান ও তাওহীদ হৃদয় মাত্র ২৯ বলে যোগ করেন ৬১ রান। সাকিব ২৪ বলে অপরাজিত ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে তাওহীদ হৃদয়ের আউটে শেষ হয় তার ১৩ বলে ২৪ রানের ক্যামিও।
শেষ বল খেলতে নেমে নাজমুল শান্ত নিয়েছেন একটি ডাবল। স্ট্রাইক রেটের হিসেব করলে তিনি দাঁড়িয়ে গেছেন আগের ব্যাটারদের সাথে। শান্তর স্ট্রাইক রেটও যে ২০০! আর এমন দিনে ১৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় পাহাড়সম, ২০২।
/এম ই
Leave a reply