আলমগীর হোসেন:
আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণের টাকা ফেরত না আসায় কমছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। এটি অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকট কাটাতে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর সাথে সাথে ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সাধারণ সময়ের মতো বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা ঠিক না। বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কমছে সঞ্চয় ক্ষমতা। এর সাথে যোগ হয়েছে মানুষের আস্থাহীনতা। সব মিলিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আমানতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসেবে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। অন্যদিকে বিতরণ করা ঋণের টাকাও সময়মতো ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা খেলাপি গ্রাহকদের কাছে। ব্যাংকাররা বলছেন, টাকা ফেরত না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফোর্স লোন করতে যাচ্ছে তাদের। এসব কারণে ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগের ক্ষমতা কমছে বলেও জানান তারা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানে সবকিছুই শর্ট টাইম ডিপোজিট। কমার্শিয়াল ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও আমরা ইন্ডাস্ট্রিকে লোন দিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাচ্ছে, আমরা দীর্ঘ মেয়াদে লোন দিতে পারবো না। এর মধ্যে কিছু লোন হয়ে যাচ্ছে ফোর্স লোন, কিছু হচ্ছে টার্ম আউট। এই প্রক্রিয়ায় যেসব লোন থেকে যাচ্ছে সেসবকে টার্ম আউট করে দিচ্ছি। নতুন করে তাই আমরা টার্ম লোন নিতে পারবো না।
বিচারহীনতার কারণেই ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তারা। তারল্য সংকটে নতুন বিনিয়োগ কমলে প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মন্তব্য অর্থনীতিবিদের।
বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পছন্দ করে না, সেই সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের আস্থা বাড়লেই ডিপোজিট বাড়বে। নতুন করে ডিপোজিটেও যেতে পারবে। নতুন লেন্ডিং কম হলে প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর লেন্ডিংয়ের জন্য টাকা লাগবে তো! টাকা ফেরত আসছে না। মানুষের আস্থাও ফিরছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কাঙ্ক্ষিত হারে প্রবৃদ্ধি না হলেও আমানত বেড়েছে। তারল্যের সংকট নেই। তবে সাধারণ সময়ের মতো বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, বিনিয়োগ কিন্তু হচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে রফতানির যে ধারাবাহিক বৃদ্ধি, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না। এটা এমন একটা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট যেখানে স্বাভাবিক সময়ের যে ধারা, তা চিন্তা করা হয়তো সঠিক হবে না।
নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করায় বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথাও বলছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
/এম ই
Leave a reply