৩০ মিনিটে ২৪ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার সরিয়েছে দুই ভাই, চুরির ইতিহাস ১৫ বছরের

|

আটককৃত দুই সহোদর চোর জুলহাস (৩১) ও বিল্লাল হোসেন (২৬)।

সম্প্রতি চুরির অভিযোগে জুলহাস (৩১) ও বিল্লাল হোসেন (২৬) নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সাভার ও চাঁদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে এক জোড়া হাতের চুরি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন ও গলিত রূপান্তরিত স্বর্ণসহ মোট ৮ ভরি ১০ আনা স্বর্ণ এবং বিভিন্ন ধরনের চাবি, রেঞ্জসহ চুরি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত স্বর্ণালংকার।

জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানার আহাম্মেদ নগরে জনৈকা সিরাজুম মুনীরার বাসার তালা ভেঙে আনুমানিক ২৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। পরে সিসিটিভি দেখে জুলহাস-বিল্লাল সহোদরকে শনাক্ত করা হয়। এরপর, তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সাভার গেণ্ডা বাস স্টেশন থেকে বিল্লাল হোসেন ও তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া চোরাই স্বর্ণ রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামে এক স্বর্ণ দোকানদারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ধরে চুরি করে আসছে ভোলার লালমোহন উপজেলার আবু কালামের ছেলে জুলহাস ও বিল্লাল। দুই ভাই চুরিতে হাত পাকানো শুরু করে শৈশব থেকেই। আর, দুইজনে মিলে চুরি শুরু করে ২০০৮ সাল থেকে। সে হিসেবে চুরিতে তাদের ক্যারিয়ার এখন পর্যন্ত ১৫ বছরের।

তাদের দেয়া তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে তারা দুই শতাধিক চুরি করেছে। চুরি করেই তারা অন্য জেলায় চলে যেতো। এজন্য অধিকাংশ ঘটনায় তারা থাকতো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতগুলো চুরি করলেও তারা ধরা পড়েছে মাত্র ১০ বারের মতো। আর মামলা হয়েছে মাত্র ৩টি! তবে তাদের চুরির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। অন্যান্য চোররা ঘরে ঢুকলে সাধারণত যা পায় সবই নিয়ে যায়। কিন্তু, জুলহাস-বিল্লাল শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করতো। কারণ, এ দুটি সহজেই বহনযোগ্য। সাধারণত চোরেরা রাতের বেলা চুরি করলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এই দুই চোর সহোদর। জুলহাস-বিল্লাল শুধু দিনের বেলা চুরি করতো বলে জানিয়েছে। এজন্য, দিনের বেলা সাধারণত যে সময়টায় বাচ্চারা স্কুলে থাকে সে সময়টাকেই তারা চুরির জন্য বেছে নেয়। ওই সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরাও অফিস বা নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকেন। আর মহিলা সদস্যরা বাচ্চাদের স্কুলে যান। ফলে বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালাতে পারার সুবাদে আগে থেকেই এমন একটি বাসা টার্গেট করে বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ গিয়ে সেই বাসায় চুরি করে তারা।

১১ বছর বয়সে শুরু, ছোট ভাই গুরু!

দুই ভাইয়ের মধ্যে জুলহাস বড় আর বিল্লাল ছোট। তবে বয়সে ছোট হলেও চুরিতে বড় বিল্লাল! মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই চুরি শুরু করে বিল্লাল। তখনও শুধু স্বর্ণ আর টাকা চুরি করতো সে। পরে তার কাছ থেকেই চুরি শেখে বড় ভাই জুলহাস। দুই ভাই মিলে চুরি করলে বিল্লাল সবসময়ই বাসা টার্গেট করে এবং পাহারায় থাকে। আর চুরি করে জুলহাস।

৩০ মিনিটেই ২৪ লাখ টাকার চুরি!

জানা গেছে, সর্বশেষ চুরির সময় বাসায় কেউ না থাকায় অনেকটা বিনা বাধায় তৃতীয় তলায় উঠে ঘরের দরজা ভেঙে, ঘরের ভেতরের প্রতিটি আলমারির তালা, ওয়ারড্রোবের লক ও ড্র‍য়ার খুলে স্বর্ণের হদিস পেলে ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে জুলহাস। আর এসব কিছু করতে জুলহাসের সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট! ৩০ মিনিটেই প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে সে!

জামাই চুরি করে, আর চুরির মাল বিক্রি করে শ্বশুর!

জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরির পরপরই শ্বশুরবাড়ি চলে যায় জুলহাস। জামাইয়ের এ চুরির কথা শ্বশুরের অজানা নয়। কিন্তু তিনি এতে বাধা দেয়া দূরের কথা, উল্টো সহযোগিতা করেন জামাইকে! জামাই জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে তা আবার তুলে দেয় শ্বশুরের হাতেই। আর তার শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন। মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতেই তুলে দিয়েছিল। তার শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে দেন। অভিযান চালানোর সময় জামাই জুলহাস গ্রেফতার হলেও পালিয়ে যান শ্বশুর আলাউদ্দিন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply