দশম শ্রেণি পড়ুয়া প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেফতার

|

প্রতীকী ছবি

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

রংপুরের মিঠাপুকুরে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে কোচিং সেন্টারের ভিতরে বন্ধুদের সহযোগিতায় ধর্ষণের অভিযোগে প্রেমিক কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে রাজধানীর কল্যানপুর থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যয় বিচার দাবি করেছেন পরিবার ও স্থানীয়রা।

মামলা ও প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, উপজেলার বড়বলা ইউনিয়নের বারোঘরিয়া গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম মহুরীর পুত্র রেজওয়ানুল ইসলাম শিশিরের (২৫) সাথে বছর দেড়েক থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাশের তরবাহাদী গ্রামের এক গার্মেন্টস শ্রমিকের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক কন্যার। ওই ছাত্রী ছড়ান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আর শিশির বর্তমানে ঢাকার তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় ছড়ার বাজারের ভূমি অফিস সংলগ্ন কনফিডেন্স কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সহযোগিতায় স্কুলছাত্রীটির সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় শিশির। শিশির ছাত্রীটিকে বিয়ে করছিল না। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী ঘটনাটি তার পরিবারকে জানালে স্থানীয়ভাবে তাদের বিয়ে দেয়ার ব্যপারে আলোচনা হয়। কিন্তু শিশিরের পরিবার থেকে তা মেনে না নেয়ায় স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে শিশিরকে প্রধান এবং আরও ৩ বন্ধুকে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করে থানায় ধর্ষণ মামলা দিয়েছে।

ওসি আরও জানান, মামলার পর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর কল্যানপুর এলাকা থেকে শিশিরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (২০ এ্রপ্রিল) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার শিকার ছাত্রীটির মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য আাসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে চার্জশিট দেয়ার কথা জানান তিনি।

ঘটনার শিকার স্কুলছাত্রীর মা জানান, আমাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না। একজনের কাছ থেকে জন্মের পর এই মেয়েকে আমরা দত্তক নিয়ে তাকে নিজের মেয়ে হিসেবে প্রতিপালন করছি। ওর বাবা ঢাকায় গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। আমি বাড়িতে থেকে অনেক কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করাচ্ছি। আমার সহজ সরল মেয়েকে শিশির বিভিন্নভাবে লোভ দেখিয়ে বিয়ে করার কথা বলে কনফিডেন্স কোচিং সেন্টারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। বিষয়টি জানা মাত্রই প্রথমে আমরা শিশিরের পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের বিয়ে দেয়ার জন্য দাবি জানাই। কিন্তু তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কোনো পাত্তা দেয়নি। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে জানাই। তিনিও আমাদের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি। পরে আমি থানায় মামলা করি। আমি অনেক প্রতীক্ষার পর কষ্ট করে মেয়েকে পেয়ে আমি নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শিশির আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করলো এবং আমাদের পরিবারের আর মুখ দেখানোর জায়গা নেই। আমি শিশিরের ফাঁসি চাই।

স্থানীয় চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম সরকার স্বপন জানান, আমাকে মেয়ে কিংবা ছেলে কোনো পক্ষ থেকেই বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। আইনগতভাবে এখন এর সমাধান হবে। অপরাধী যেই হোক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন তার উপযুক্ত শাস্তি হয়।

ঘটনাস্থল কনফিডেন্স কোচিং সেন্টারের পরিচালক রওশন হাবিব জানান, আমরা কয়েকজন অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং পরিচালনা করছি সুনামের সাথে। ওই বাসাটি দেখাশুনা করেন মালিকের ভাগিনা মোস্তাফিজার রহমান। সেই সুবাদে আমাদের পাশাপাশি মোস্তাফিজের কাছেও একটি চাবি থাকতো। মোস্তাফিজ শিশিরের বন্ধু। কোচিং বন্ধ থাকাকালীন সময়ে মোস্তাফিজ চাবি খুলে আমাদের কোচিং ব্যবহার করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা চাই এই ঘটনার সঠিক বিচার হোক।

অন্যদিকে এ ব্যপারে বক্তব্য জানতে শিশিরের তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাওযা যায়নি। তার পিতার মোবাইল ফোনেও একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply