আব্দুল্লাহ তুহিন:
অত্যন্ত ধীরে এগুচ্ছে বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ধস মামলার কার্যক্রম। সাক্ষীর অভাবসহ নানা কারণে কার্যক্রম অনেকটাই থমকে আছে। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে তাও বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ভয়াবহ ঐ ঘটনার দুই বছরের মাথায় চার্জশিট দেয়া হলেও পেরিয়ে গেছে ১০ বছর। এ নিয়ে হতাশ ভুক্তভোগীরা।
কারখানার যথাযথ নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না থাকলে কতটা ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনা। ভয়াবহ ঐ ঘটনা নাড়া দিয়েছে গোটা বিশ্বের পোশাক শিল্পকে। ১০ বছর আগের সেই ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত এবং আহত হন প্রায় আড়াই হাজার হতভাগ্য পোশাক কর্মী। সে ঘটনার পর মা-বাবা-স্বামী-সন্তান হারানো অসংখ্য মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল ঘিরেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে শ্রমিক নেতারা আসে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে যায়। সরকার, বিজিএম, শ্রমিক নেতারা-কেউই তাদের খোঁজখবর নেয় না।
দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে এতগুলো মানুষ হত্যার প্রমাণ পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৫ সালে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে দেয়া হয় চার্জশিট। ২০১৬ সালে বিচার শুরু হলে অভিযুক্তরা একের পর এক দ্বারস্থ হয় হাইকোর্টের। এতে ২০২২ সাল পর্যন্ত থমকে থাকে বিচারকাজ।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমদ্দার বলেন, এই মামলায় চার্জশিটকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন প্রভাবশালী আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন। এরমধ্যে ছয় জনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে।
আলোচিত ঐ ধসের ঘটনায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র ৪৫ জনের। এমন বাস্তবতায় কবে নাগাদ মামলার বিচার শেষ হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিমল সমদ্দার বলেন, কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য যথেষ্ট তৎপর। এবং, বিজ্ঞ আদালতও তৎপর। অনেক সাক্ষীকেই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যেক ধার্যকৃত তারিখে প্রায় ২০ জনকে আদালত কর্তৃক প্রসেস প্রদান করা হয়। সেখানে ৭-৮ জন করে আসেন। কারও পা নেই, কারও হাত নেই। কেউ বিকলাঙ্গ। কারও মস্তিষ্ক বিকৃত।
দুর্ঘটনার বিচারকাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে, এমন যুক্তি দেখিয়ে ৬ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান প্রধান অভিযুক্ত ভবন মালিক সোহেল রানা। যদিও তা স্থগিত করে দেন চেম্বার জজ আদালত। যার চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য আছে ৮ মে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
বিচারকার্যের স্থবিরতায় হতাশা প্রকাশ করে একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, আমাদের প্রতিবাদগুলোকে যদি সরকার মনেপ্রাণে গ্রহণ করতো, তাহলে এতদিনে এই বিচারের একটা ফলাফল আমরা পেতাম। একটা রাষ্ট্রে এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও রাষ্ট্র যখন দায়িত্ব নেয় না, তখন রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের নির্ভরতার জায়গা আর থাকে না।
বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম ঐ শিল্প দুর্ঘটনার পরও দেশের শিল্প কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে আর, কতটা ঝুকিপূর্ণ রয়ে গেছে তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে।
/এম ই
Leave a reply