মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষার হলে ২ বোন

|

টেকনাফ এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন। ছবি: সংগৃহীত

রমজানের সময় ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন আনোয়ারা (৫০) বেগম। এরপর থেকে নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সোমবার রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম নেয়ার প্রস্তুতিকালে উচ্চ রক্তচাপের কারণে আনোয়ারা বেগম মারা যান।

শোকে বিহ্বল স্বজনেরা নিচ্ছেন লাশ দাফনের প্রস্তুতি। এমন অবস্থায় মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন নামের দুই বোন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে মায়ের লাশ দাফনে অংশ নেন তারা।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই বোন সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা টেকনাফ উপজেলা সদরের এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আজ সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যান দুই বোন। সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় দিনের বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেন তারা।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানছড়ি পাড়া গ্রামের জহির আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০)। তাদের পরিবারে তিন মেয়ে ও চার ছেলে সন্তান রয়েছে। হঠাৎ ভোরের দিকে মা আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়। বাড়ি জুড়ে শোকের আবহ। মায়ের মৃত্যুর পর সাদিয়া ও শারমিন ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যান তারা।

সাদিয়া ও শারমিন বলেন, মা আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। চাইতেন আমরা যেনো পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। মায়ের আত্মাকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না।

সাবরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ দৌল্লাহ বলেন, মা হারানো দু’জন শিক্ষার্থী খুবই মেধাবী। মেয়েগুলো দুটি কক্ষে আলাদাভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে তাদের মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।


যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।

দুই কক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক জাকারিয়া আলফাজ ও রিফাত জাহান মিনা বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে সকল শিক্ষার্থীরা তাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তবে মাঝে মধ্যে তারা দু’জন কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার খাতায় লিখতে দেখা গেছে। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, দুই পরীক্ষার্থীর মায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য তাদেরকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়।

কেন্দ্র সচিব ও সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি চৌধুরী বলেন, সাদিয়া ও শারমিনের মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সকালেই জানতে পেরেছিলাম। সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিলে তাদের জন্য ভালো হবে ভেবে তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম তারা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। তারা দুই বোন এক হাতে রুমাল দিয়ে বারবার চোখ মুছছিল। আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মাকে হারানো যে কারোর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ও শারমিন মা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তাদের পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply