কাজী মনিরুজ্জামান মনির, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে পরীক্ষামূলকভাবে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান বাড়ি। প্রায় ৩ কাঠা জমি নিয়ে তৈরি এ বাড়িতে রয়েছে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। বন্যা ও ঝড় সহ জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষম বিশ্বে এমন বাড়ি এই প্রথম দাবি নির্মাতাদের।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার মনাই হাওলাদার কান্দি গ্রাম। পদ্মার তীর ধরে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে নদীর বুকে ভেসে থাকা একটি ছোট্ট বাড়ি। সম্পূর্ণ বাশঁ আর কাঠ দিয়ে তৈরি বাড়িটি দেখলে নজর কাড়বে যে কারোর। বন্যা, ঝড় আর ভূমিকম্প এসব দুর্যোগ থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখবে বাড়িটি। শুধু তাই নয় দুর্যোগকালীন সময় এই বাড়ি থেকে আয় করে সংসারও চালানো যাবে। সম্পূর্ণ আধুনিক সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও রয়েছে বাড়িটির মধ্যে। রান্নাঘর আর গোসলখানাসহ পাঁচটি কক্ষ ছাড়াও আছে একটি ছোট উঠানও।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। দুইটি টার্বাইনের মাধ্যমে পানি চলে যাবে ব্যবহারের স্থানে। নানা ধরনের ফসলে সবুজ করে রেখেছে বাড়ির চারিদিক। মুরগী লালন পালনের জন্য রয়েছে ছোট খামার, বাড়ির মধ্যেই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ আর বায়োগ্যাস থেকে গ্যাসের চুলায় রান্নার সুব্যবস্থাও রয়েছে। রাতে সোলারের আলোয় আলোকিত হয় ভাসমান বাড়িটি। এ এক অন্য রকম দৃশ্য।
বন্যার সময় বাড়িটি ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করবে ১৮৯টি তেলের খালি ড্রাম। সুবিধাভোগীরা বাড়িগুলি পেয়ে বেশ খুশি। তারাও মনে করেন দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম হবে এই বাড়ি। পাইলটিং এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে স্থানীয়ভাবে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরাও মনে করছেন যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তাতে বাড়িটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। আর এই বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই ভীড় জমায় দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় গ্রামবাসী বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নেরবাড়ি’। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের’ একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে একই ধরনের তিনটি বাড়ি। নকশা করেছেন ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী গবেষক নন্দন মুখার্জী। এরই মধ্যে বাড়িগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তিনটি পরিবারকে। প্রতিটি বাড়ি বানাতে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ খরচ হলেও এখন তা ৫ থেকে ৩ লাখে বানান সম্ভব বলে মনে করেন প্রকৌশলী শুভ্রদাস ভৌমিক।
স্থানীয় আবেদুল হক শ্যামল জানান, আগে মাটির উপর ছিল এই বাড়িটি। পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীতে ভাসতে শুরু করে। এখন নদী দিয়ে কোন নৌযান গেলে বাড়িটি দুলতে থাকে। এতে বোঝা যাচ্ছে বন্যার সময় এমন বাড়ি কাজে আসবে। ভাসমান বাড়িটি বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকেও দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন।
স্থানীয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ হাসান বকাউল বলেন, এলাকাটি দুর্যোগপ্রবণ ভেবেই বেছে নিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। যে ভাবে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে তাতে ২৫ বছর টেকসই হবে। পরীক্ষায় টিকে গেলে বাড়িটি হবে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
Leave a reply