ফরিদপুরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

|

বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় হত্যাকাণ্ডের বিরোধের জের ধরে গোলাপী বেগম (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১ মে) দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ওই নারীর নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের যোগিবরাট গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৩ মে গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আলফাডাঙ্গা উপজেলার যোগিবরাট গ্রামে শরিফুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হয়। নিহতের ঘটনায় শরিফুলের চাচা বাদী হয়ে নির্যাতিত ওই গৃহবধূর স্বামী কৃষক ইব্রাহিম শেখসহ আরও ২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে হত্যা মামলার আসামি ইব্রাহিম শেখ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে আসে। কিন্তু জামিনে আসলেও প্রতিপক্ষের ভয়ে দীর্ঘকাল পালিয়ে বেড়াতে হয় তাকে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জেরে গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ইব্রাহিম শেখ তার পাটের জমিতে কাজ করছিল। এই খবর পেয়ে নিহত শরিফুল ইসলামের ভাই সাগর মোল্যার নেতৃত্বে ২০-৩০ জন লোকজন নিয়ে ইব্রাহিম শেখের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরে সে দৌঁড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। এরপর হামলাকারীরা কৃষক ইব্রাহিম শেখের বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় বাড়িতে থাকা ইব্রাহিম শেখের ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী গোলাপী বেগমকে বাড়িতে পেয়ে হামলাকারীরা তাকে বেধড়ক লাঠিপেটা ও তলপেটে লাথি মেরে চলে যায়। পরে প্রতিবেশীরা এসে গুরুতর আহত অবস্থায় গোলাপী বেগমকে পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। ওইদিন রাতেই গোলাপী বেগমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিজারের মাধ্যমে তার কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দুইদিন পর নবজাতক শিশুটি মারা যায়।

নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী ইব্রাহীম শেখ বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে আমাকে না পেয়ে আমার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। বাড়িতে থাকা আমার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একা পেয়ে তারা প্রচুর নির্যাতন করে। পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে ঢাকায় সিজার করা হয়। সিজারের দুইদিন পর সোমবার ভোর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার নবজাতক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়। শিশুটির শরীরেও আঘাতের কালো দাগ ছিলো। তাদের নির্যাতনের কারণে আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্তদের বাড়িতে গেলে কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের বলেন, নবজাতক ওই শিশুটির মরদেহ গ্রামে আসলে পুলিশি টহল মোতায়েনের মাধ্যমে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। নবজাতক শিশুটি মারা যাওয়ার আগেই ওই গৃহবধূকে মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা তদন্তকালে চিকিৎসকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আসামিরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply