মারিয়া হোসেন:
দুনিয়া কাঁপানো স্পাই থ্রিলার জেমস বন্ড সিরিজের প্রধান যোদ্ধা তিনি। টানা এক যুগ বিশ্বখ্যাত এ ফ্র্যাঞ্চাইজির নায়ক ছিলেন একাই। সাতটি ‘জেমস বন্ড’ সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। তিনি হলিউড অভিনেতা রজার মুর। ২০১৭ সালের আজকের দিনে চলে যান চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল এ নক্ষত্র।
চরিত্রের মধ্যে কোনো অভিনেতা কতোটা ডুবে যেতে পারেন, তার অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সম্ভবত স্যার রজার জর্জ মুর। সাতটি বন্ড সিনেমায় অভিনয় করার পর ‘ডাবল ও সেভেন’-এর ব্যাটনটা টিমোথি ডালটনের হাতে দিয়ে যান। তবে পরের পাঁচ বছরে অন্য কোনো সিনেমা আর হাতে নেননি তিনি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সারা জীবন লোকে আমাকে বন্ড বলে জানলেও তো কোনো ক্ষতি নেই।
যদিও শুধু বন্ড হিসেবে মুরকে চিনলে অবিচার করা হবে তার প্রতি। ‘ম্যাভেরিক’ কিংবা ক্রাইম শো ‘দ্য সেন্ট’ আর ‘দ্য পারসুয়েডার’-এ তার অনবদ্য অভিনয় মন কাড়ে দর্শকদের। এমনকি ‘শার্লক হোমস ইন দ্য নিউ ইয়র্ক’ সিনেমায় শার্লক হোমসের ভূমিকাতেও অভিনয় করেন তিনি।
১৯২৭ সালে লন্ডনে জন্মেছিলেন স্যার রজার মুর। ছোটবেলা থেকেই শিল্পী হতে চেয়েছেন। কার্টুন অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে ব্যর্থতাটা তার জীবনে শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। পরিচালকের অনুরোধেই সিনেমায় কাজ শুরু করেন। চুক্তিবদ্ধ হন বিখ্যাত এমজিএম প্রোডাকশনের সঙ্গে। তাকে ‘বন্ড’ চরিত্রে কাস্ট করার কথা আগেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু, টিভির কাজে ব্যস্ত থাকায় তখন সময় দিতে পারেননি মুর।
১৯৭৩ সালে প্রথম বন্ড ফিল্ম করেন ‘লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’। বাকিটা তো ইতিহাস। পরের বারো বছর বন্ড সিনেমায় মার্টিনি হাতে দেখা যায় তাকেই। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনিই বন্ডের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি অন্যতম বন্ড, যিনি শ্যুটিং লোকেশনকে রীতিমতো টুরিস্ট স্পটে পরিণত করে ফেলেছিলেন। তাই হয়তো, বন্ডের পর স্পটলাইট থেকেই সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে।
১৯৯১ সাল থেকে ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ‘মানবতার সেবা’র জন্য তাকে সম্মানজনক নাইটহুডে ভূষিত করেন। ২০০৮ সালে ফরাসি সরকার তাকে ‘অড্রে দ্যু আর্টস এতুদে লেটার’-এর কমান্ডার উপাধি দেন। এর আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দেশের হয়ে যুদ্ধও করেছেন তিনি।
তবে অনিচ্ছায় অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন স্যার রজার। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শন কনারি নন, তার প্রিয় বন্ড ড্যানিয়েল ক্রেগ। আর তা নিয়েই ঝড় ওঠে হলিউডে। কিন্তু, সেসব বিতর্কে কোনোদিনই কান দেননি তিনি।
আদতে রজার মুর এক লড়াকু ব্যক্তির নাম। ২০১২ সালে তার স্কিন ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০১৩ সালে ধরা পড়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস। তারপর আবার আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। একবার স্টেজের মধ্যে পড়েও যান। শেষ পর্যন্ত পর্দার এ দুর্ধর্ষ নায়ককে পরাজিত হতে হয় ক্যানসার নামক ঘাতকের হাতে। আজকের দিনে সুইজারল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন স্যার রজার মুর। কিন্তু, জেমস বন্ডের কি মৃত্যু আসলেই আছে?
/এসএইচ
Leave a reply