বাখমুতে রাশিয়ার সাফল্যের পেছনের কারিগর ‘ওয়াগনার গ্রুপ’

|

ছবি : সংগৃহীত

বাখমুতে রাশিয়ার সাফল্যের পেছনের কারিগর ওয়াগনার গ্রুপ। এভাবেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আখ্যায়িত করা হচ্ছে রুশপন্থী ভাড়াটে সেনাদলটিকে। খবর এপি নিউজের।

দীর্ঘ ৮ মাসের লড়াইয়ে বাখমুত ফ্রন্টলাইন আগলে ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। গত সপ্তাহে জয় ঘোষণার পর, তাদের স্বীকৃতি দেন খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে আসে, সাফল্যের পেছনের কারিগর হিসেবে ভাড়াটে সেনাদলটির নাম।

তবে, ক্ষোভ কমেনি ওয়াগনার প্রধানের। জানান, যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়েছেন ২০ হাজার যোদ্ধাকে। আহত ৭০ হাজারের মতো। যাদের বিভিন্ন সময় রাশিয়ার কারাগার থেকে ফ্রন্টলাইনে এনেছিলেন তিনি। আশ্বাস দিয়েছেন, যুদ্ধে জয় পেলে সাধারণ ক্ষমতার আওতায় ফিরতে পারবেন নিজ বাড়িতে।

রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জয় চাইলে, নিজ সন্তানদের রণক্ষেত্রে পাঠাক রুশ অভিজাতরা। কারণ, তাদের সন্তানরা যখন মাখন দিয়ে রুটি খাচ্ছে; সে সময় সুরক্ষায় সীমান্তে মারা যাচ্ছে দরিদ্ররা। বাখমুতে নিহত এক যোদ্ধার বাবা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন আপনি কমান্ডারদের মেডেল দেন; আমার সন্তানও কি দোষ করেছে? রুশ কর্মকর্তাদের বলবো- বলশেভিক বিদ্রোহের মতো আরেকটি গণ-জাগরণ দেখার প্রস্তুতি নিন।

অবশ্য পুতিনের প্রতি এখনো অনুগত প্রিগোঝিন। আশ্বাস দিয়েছেন, বিপদে পড়লে আবারও দাঁড়াবেন রুশ প্রেসিডেন্টের পাশে।

ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন আরও বলেন, বাখমুতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবো পুতিন প্রশাসনকে। কারণ, পুনর্গঠিত হতে হবে ওয়াগনার গ্রুপকে। ২০ হাজার যোদ্ধা মারা গেছেন লড়াইয়ে। আগামী কয়েক মাসে ১০ হাজার নতুন যোদ্ধা যোগ দিবেন দলে। তাদের দিতে হবে প্রশিক্ষণ। কারণ, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী অনেক শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের হাতে সোভিয়েত থেকে ন্যাটো আমলের সব অস্ত্র এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম রয়েছে। বাখমুত সামলাতে রুশবহর অপারগ হলে, প্রয়োজনে আবারও দায়িত্ব নিবো আমরা।

ওয়াগনারের দাম্ভিকতা নিয়ে এখনো রয়েছে প্রশ্ন। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের আশকারায় মস্কোকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার সাহস পাচ্ছে তারা।

সেইন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপস পি ও’ব্রায়ান বলেন, রাশিয়ার কাছে কখনোই বাখমুত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ, সেখানে যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরির কারখানা নেই, নেই অস্ত্রের কাঁচামাল। কিন্তু দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কারণে রয়েছে প্রতীকী মূল্য। পুতিনের কৌশলটা বেশ স্পষ্ট; সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না। একদিকে তিনি ইউক্রেনীয় ফ্রন্টলাইন আটকে রাখলেন। যার কারণে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতে পারেনি ওয়াগনার গ্রুপ।

রয়েল সার্ভিস ইন্সটিটিউটের রিসার্চ ফেলো এড আর্নল্ড বলেন, বাখমুত পতনের পর প্রথমবার জনসম্মুখে প্রিগ্রোঝিন এবং ওয়াগনার গ্রুপের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এর মাধ্যমে ভাড়াটে সেনাদলটির ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত করেছেন তিনি। কারণ, ভবিষ্যতে আবারও তাদের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। সে কারণেই প্রিগোঝিনের মুখ থেকেও পুনরায় এসেছে আশ্বাস।

বিবিসির এক অনুসন্ধান বলছে, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা এক রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা। যা কৌশলে হাতিয়ে নেন এককালে পুতিনের রাঁধুনী হিসেবে পরিচিত ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। বর্তমানে যোদ্ধাদের সিংহভাগই জেলখাটা ডাকসাইটে অপরাধী।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply