চট্টগ্রামের বিমএম ডিপো ট্রাজেডির এক বছর, আজও ক্ষতিপূরণ পাননি ভুক্তভোগীরা

|

চট্টগ্রামের বিএম ডিপো’তে স্মরণকালের ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ভয়াল সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি নিহতদের স্বজনরা; ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন আহতরা। ভয়াবহ বিস্ফোরণ আর অর্ধশতাধিক প্রাণহানির পরও চট্টগ্রামে এখনও শত শত ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কারখানার ছড়াছড়ি। যেগুলোতে নেই কোনো অগ্নি নিরাপত্তা, সুরক্ষা ব্যবস্থা।

গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুন্ডে বিএম ডিপোতে স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো এলাকা। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে ৮৬ ঘণ্টা অর্থাৎ সাড়ে ৩ দিন। বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো ডিপো। ডিপোর শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ প্রাণ হারান ৫১ জন, আহত এবং পঙ্গু হন অন্তত ২০০ জন।

এক বছর পরও ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি বিষ্ফোরণে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা। তাদের মধ্যে নিহত লরি চালক আবুল হাশেমের পরিবারে এখনও কাটেনি শোকের ছায়া। ঘটনার ৩৪ দিন পর ডিপোর ভেতর পাওয়া গিয়েছিল দগ্ধ হাশেমের মরদেহ। ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেও তার শুন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

নিহত হাশেমের স্ত্রী মুসলিমা আক্তার জানান, ঘটনার দিন হাশেম কথা দিয়ে গিয়েছেন ২ ঘণ্টা পরই ফিরে আসবেন বাড়িতে। কিন্তু সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়নি আজও। নিহত হাশেমের মেয়ে সালমা আকতারের অভিযোগ, ঘটনার সময় ডিপোর ভেতরে আটকে পড়া মানুষদের বের করে নেয়ার বদলে সমস্ত গেট আটকে দেয়া হয়। এ কারণে সেখান থেকে চাইলেও বের হতে পারেননি কেউ।


যমুনা টেলিভিশনের সবশেষ আপডেট পেতে Google News ফিড Follow করুন।

সেদিনের বিস্ফোরণের তীব্রতায় লোহার পাত উড়ে গিয়ে পড়েছিল কয়েক কিলোমিটার দূরে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বসতঘর, অনেকে আহতও হন। সেই ক্ষতচিহ্ন এখনও স্পষ্ট। আহত শ্রমিকদের অনেকে এখনও ক্ষত নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। তাদের দাবি, যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ সেই কথা রাখেনি। দুর্ঘটনার কারণে মারাত্মক আহত হওয়ায় কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেকে।

ছবি: বিস্ফোরণের পর কয়েক কিলোমিটার দূরে ছিটকে পড়া লোহার অংশ।

এতো ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং এতো প্রাণহানির পরও সীতাকুন্ডসহ পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলে শত শত অবৈধ কল কারখানার ছড়াছড়ি। নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও। কলকারখানা ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরও এ ব্যাপারে নির্বিকার। বিএম ডিপোর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে কর্তৃপক্ষের দায় নেই উল্লেখ করে তাদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছে পুলিশ। তবে নজরদারি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, আমরা একাধিক টিম করে দিয়েছি। তারা এই অঞ্চলের শিল্প কারখানাগুলো পরিদর্শন করে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করবে। যদি সেখানে কোনো ঘাটতি থাকে তাহলে সেগুলো সুধরে নিতে নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেয়া হবে।

এদিকে এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিস্ফোরণে হতাহতদের স্বজনরা। তারা বলছেন, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আবারও চালু করা হয়েছে কার্যক্রম। এর যথাযথ জবাব চান তারা।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply