কামাল হোসাইন, নেত্রকোণা:
পর্যটন সম্ভাবনার আকর্ষণীয় জনপদ হয়ে উঠছে নেত্রকোণার মদন উপজেলার উচিতপুর। দিনে দিনে হাওর পাড়ের এ স্থানে পর্যটকদের পদচারণার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু লোকজনের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে হাওরাঞ্চলের এ জনপদটি।
বিশেষ করে সরকার হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে হেমন্তকালীন যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুবন্ত রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ করায় এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে।
এখানে সমুদ্র বা দ্বীপ নেই। তবে বর্ষার জলরাশি হয়ে পড়ে সমুদ্রের মতো বিশাল। বোরো ধানের মাঠ-ঘাট সব পানিতে হয়ে যায় একাকার। তার ওপর ছোট ছোট দ্বীপের মতো এক একটি গ্রাম ভেসে থাকে। চারদিকে অতিথি পানি থৈ থৈ করে। জলমগ্ন থাকে পথঘাট মাঠ প্রান্তর সবকিছু।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ অঞ্চলে পূবালী হাওয়ায় প্রাণটাকে শান্ত করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু, শিশু, যুবক, যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখানে আসে। হাওরের বৈচিত্র লিলা-ভূমিতে বিচরণ করে, সাঁতার কাটে আর শীতল হাওয়া উপভোগ করে।
আকষর্ণীয় এ স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যটকদের সেবা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আগত পর্যটকরা দুর্ভোগেও পড়ছেন। পর্যটকসহ সকলের দাবি সরকারিভাবে এই অঞ্চলে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় বাড়বে। এ নিয়ে এলাকাবাসী গঠন করেছেন উচিতপুর পর্যটন সুরক্ষা পরিষদ।
ঈদ পরবর্তী সময়ে উচিতপুর ঘাটে প্রচুর দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃহস্পতিবার হাওর জলের মিলন মেলায় কথা হয়, গাজীপুর জেলার কবি ইজাজ আহমেদ মিলন, তার সহধর্মীনি বিউটি আক্তার, সমকালের বর্ষসেরা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলা ভিশনের মামুন খান, যমুনা টিভির স্টাফ রির্পোটার ও দৈনিক বাংলার নেত্র পত্রিকার সম্পাদক কামাল হোসেন, নরসিংদীর আহমেদ আলী, ঘোরাশালের মরিয়ম বেগম, ভৈরবের আশিক মিয়া, মদন প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ আল আমীন তালুকদারের সাথে। তারা জানান, এখানকার সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করবে। জলের মায়ায় নিজেকে হারাতে চাইবে পর্যটকরা। হাওরটির সৌন্দর্য হৃদয়ে লেগে থাকার মতো। তবে দূর-দূরান্তের লোকজনের সেবার কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকার এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করতে পারেন।
নেত্রকোণা শহরের বাসিন্দা ও গণমাধ্যম কর্মী পল্লব চক্রবর্তী জানান, হাওরের কোল ঘেষা এ স্থানে দ্রুত শৌচাগার, স্থানে স্থানে বেঞ্চ, খাবারের হোটেল, ডাকবাংলো করা দরকার। এগুলো করলেই বর্ষার ছয় মাস পর্যটকদের আনাগোনো বেড়ে যাবে।
গণমাধ্যম কর্মী ও কবি মামুন খান জানান,সম্প্রতি পর্যটকদের যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।
উচিতপুর পর্যটন সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষ মোঃ শামছুল আলম তালুকদার জানান, আমরা স্ব-উদ্যোগেই পর্যটকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে বিপুল পরিমাণ লোকজনের সমাগম ঘটায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে অচিরেই এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলবেন বলে তিনি আশাবাদী।
মদন থানার ওসি মোঃ রমিজুল হক জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে এ অঞ্চলে দর্শাণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। লোকজন পানিতে সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ বিভাগের অর্থায়নে ঘাটে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালীউল হাসান জানান, সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা নিয়মিত সভা করেছি। পুলিশ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
Leave a reply