কয়েক বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নানা ধরনের আইনি বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার হুলিয়া জারি হলো হোয়াটসঅ্যাপের ওপর। তাদের ডিজিটাল সেবা চালু আছে এমন সব রাষ্ট্রে অভিযোগ গ্রহণকারী প্রতিনিধি নিয়োগ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। হয়তো বিষয়টির কোনো ধরনের প্রয়োজনীয়তায় দেখা দেয়নি। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলছে এটি এভাবে চলতে পারে না। সোমবার ম্যাসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকে সমন জারি করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
ঘটনার সূত্রপাত, ডিজিটাল সেবা দেয় এমন মাধ্যমগুলোর কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে হয় সেটি থেকেই। হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠানের ভারতে কোনো ধরনের অভিযোগ গ্রহণকারী নেই। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি পিটিশন দায়ের হয়েছিল।
সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেন, একটি দেশে একটি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সেবা দেবে, কিন্তু ওই দেশে তাদের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উপস্থিতি থাকবে না, তা কি হয়?
হোয়াটসঅ্যাপকে সমন জারির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থ দপ্তরকেও তলব করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত ৷
পিটিশনে বলা হয়েছিল, ভারতের টেলিকম মন্ত্রণালয় হোয়াটসঅ্যাপকে কেবল ‘ওভার দ্য টপ’ (ওটিটি) হিসেবে বিবেচনা করছে। বাস্তবে, এটি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মতোই কাজ করছে। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে টেলিকম অপারেটরদের মতোই সব শর্ত মেনে চলতে হবে।
অবশ্য, ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান আগেই ভারতে স্থানীয় অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও এর কোনো অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা ভারতে নেই।
পিটিশনে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে আনা হয়েছে। প্রথমটি হলো, ২০১৯ সালের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা বিধি মোতাবেক স্থগিত হওয়ার পর এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভোটারদের প্রভাবিত করার সুযোগ আছে।
দ্বিতীয়টি হলো, হোয়াটসঅ্যাপই স্বীকার করেছে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট প্রতিরোধের মতো সমস্যা সৃষ্টিকারী কনটেন্ট প্রতিরোধ করতে পারে। যেহেতু এ সক্ষমতা তাদের আছে তাই কোনো ধরনের অগ্রহণযোগ্য তথ্য ছড়ালে তার দায়ও তাদের নিতে হবে। তাদের দায়বোধের জায়গা স্বচ্ছ করতেই একজন অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের কথাটি এসেছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই হোয়াটসঅ্যাপ ভারতে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ও ভুয়া খবর ছড়ানোর জেরে দেশটিতে গণপিটুনিতে ২০ জনএর মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে হোয়াটসঅ্যাপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্বজুড়ে হোয়াটসঅ্যাপের ১৫০ কোটি ব্যবহারকারী আছে যার মধ্যে অন্তত ২০ কোটি ভারতের। সুতরাং, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সমন জারিকে গুরুত্বের সাথেই নিতে হবে প্রতিষ্ঠানটির। ইতিমধ্যেই তারা বেশ কিছু পদ্ধতিগত বিষয়ে ভারত সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply