‘পানির তীব্র চাপেই বিস্ফোরিত হয়েছে টাইটান’

|

স্কাই নিউজ থেকে সংগৃহীত ছবি।

কোন পরিস্থিতিতে বা ঠিক কীভাবে বিস্ফোরিত হলো টাইটান, আটলান্টিকের তলদেশে ডুবোযানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার পর তা নিয়েই চলছে নানা জল্পনা আর বিশ্লেষণ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সাগরের ৩ কিলোমিটার নিচে পানির প্রচণ্ড চাপে বিস্ফোরিত হয় ডুবোযানটি। আর এ ঘটনা ঘটে, গত রোববার (১৮ জুন) যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরই। এ ট্র্যাজেডির পর, টাইটানিক দেখতে সাগরতলে যাত্রা বন্ধের আহ্বানও জানাচ্ছেন গবেষকরা। খবর ইউএসএ টুডের।

সাবমারসিবল ‘টাইটান’ তৈরি হয়েছিল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর উন্নত সরঞ্জামে। অ্যারোস্পেস গ্রেডের কার্বন ফাইবারের কাঠামো আর ফাইবার গ্লাসের বহিরাবরণ ছিলে টাইটানের। বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করে নিয়মিত এর যাত্রীও হয়েছেন অনেকে। অনেকগুলো সফল মিশন শেষ করা টাইটানের এমন করুণ পরিণতি কেনো? এখন উঠছে সে প্রশ্নই। আটলান্টিকের নিচে আসলে কী ঘটেছিলো টাইটানের সাথে- এখন বিভিন্নভাবে চলছে তারই বিশ্লেষণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরিত হওয়ার সময় টাইটানের অবস্থান ছিলো আটলান্টিকের ৩ কিলোমিটার নিচে। যেখানে সমুদ্রের উপরের দিকের চেয়ে পানির চাপ ছিল চারশ’ গুণ বেশি। সেই সাথে, তীব্র ঠাণ্ডা আর ঘুটঘুটে অন্ধকার মিলিয়ে পরিবেশ ছিল ভীষণ প্রতিকূল।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের ধারণা, কোনো সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা নয়, বরং পানির প্রচণ্ড চাপেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় টাইটান। আর এ ঘটনাটি ঘটে রোববার যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরই। কতোক্ষণ বেচে থাকার অক্সিজেন আছে, তার হিসাব অর্থহীন হয়ে যায় তখনই।

এ প্রসঙ্গে দ্য মেরিন টেকনোলজি সোসাইটির চেয়ারম্যান উইল কোহনেন বলেন, বিস্ফোরণের পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বলে ধারণা করছি। কেন না, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওই সাবমারসিবলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াটা কি আসলেই সম্ভব? সম্ভবত আরোহীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্ফোরিত হয় সেটি। এটাকে সৃষ্টিকর্তার করুণাও বলা যেতে পারে। কারণ, সাগরের তলদেশে অন্ধকারে তীব্র ঠাণ্ডায় জীবনযুদ্ধ চালানোর মতো নির্মম পরিণতির চেয়ে আকষ্মিক এ মৃত্যু অনেকখানি সহজ হয়েছে।

মাত্র ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের টাইটানে ছিল না কোনো দরজা। ভেতরে আরোহী প্রবেশের পর বাইরে থেকে ১৭টি বিশেষ স্ক্রু আটকে দেয়া হয়। কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা, এই স্ক্রুগুলো ঢিলে হয়ে যাওয়ায় পানির চাপ বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে টাইটানে।

এর আগে, অনেক দফায় আটলান্টিকের নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গেছেন, ‘টাইটানিক’ সিনেমার পরিচালক জেমস ক্যামেরন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলছেন, নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনেই পরিণতি অনুধাবন করেছিলেন তিনি।

অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন বলেন, টাইটানের নিখোঁজ হওয়ার খবর শোনার পরই বুঝতে পেরেছিলাম সেটার পরিণতি কী হয়েছে। যানটির ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থাসহ সবকিছু এক সাথে নিষ্ক্রিয় হয়। চরম বিপর্যয় ছাড়া একসাথে এগুলো নিষ্ক্রিয় হতে পারে না। তবুও প্রার্থনা করছিলাম যেন আমার আশঙ্কা ভুল হয়। পরীক্ষামূলক কোনো যানে সাধারণ মানুষ পাঠানো একদমই উচিৎ না।

প্রসঙ্গত, টাইটান ট্র্যাজেডির পর ডুবোযানে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জেমস ক্যামেরন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply