মাদকের থাবায় ক্রমেই কাবু হচ্ছে যুবসমাজ, সবচেয়ে ঝুঁকিতে পথশিশুরা

|

রাব্বী সিদ্দিকী:

আজ বিশ্ব মাদকবিরোধী দিবস। মাদকের সমস্যা বাংলাদেশে অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা নেয়া হলেও, সহজলভ্য ও ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে মাদকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে ভাসমান মানুষ ও পথশিশুদের মাদক সেবন প্রবণতা বেড়েই চলছে। নেশার টাকা যোগাতে তারা জড়াচ্ছে নানা অপরাধের সাথে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাতেও তাদের দৌরাত্ম্য কমছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেই দেখা মিলবে মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মাদকাসক্তদের। নড়া-চড়ার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেন। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নিয়েই দিনের পর দিন একটু একটু করে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন চরম পরিণতির দিকে।

মাদকাসক্ত এসব মানুষ নিজেরাও স্বীকার করেছেন, নেশার টাকা জোগাতে বিভিন্ন অপরাধকর্ম ঘটানোর কথা। তাদের মধ্যে একজন বলেন, নেশার টাকা জোগাড় করতে মানুষের কলার ধরে নিয়ে টাকা নিতাম। ছুরি বের করে ভয়ও দেখিয়েও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেন তারা। ভাসমান আসক্ত এসব মানুষগুলোর পরিবার থেকেও নেই। স্বজনদের কাছে যেতেও চায় না তারা।

এদিকে, মাদকাসক্ত এসব মানুষকে সিরিঞ্জ সরবরাহ করে কিছু এনজিও। একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে অন্তত এইডস এর মতো মারণব্যাধীতে যেন আক্রান্ত না হয়, সেজন্যই এসব সিরিঞ্জ সরবরাহ করে এসব সংস্থা।

শহরে ভাসমান শিশুরাই এখন বেশি ঝুঁকিতে। পরিবারের ভালোবাসা বঞ্চিত এসব শিশু নেশায় আসক্ত হচ্ছে। জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত ড্যান্ডি নামক এক ধরনের আঠা পলিথিনে ভরে শ্বাস টেনে নেশা করছে এসব শিশুরা।

নেশায় আসক্ত এসব শিশুরা জানায়, একবার ড্যান্ডির ঘ্রাণ নিলে সারাদিন ক্ষুধা লাগে না। ঘুমেই কেটে যায় সারাটা দিন।

চিকিৎসক ফারজানা নাজনীন বলেন, যেকোনো মাদক সেবনে ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত কিছু বিকল হয়ে পড়ে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেকেই অত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কম বয়সে ধরা পড়ে নানা ধরনের যৌন সংক্রামক ব্যাধীও।

ভাসমান মাদকসেবীদের নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে গেলেও খুব একটা লাভ হয় না উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, ড্যান্ডি নামক মাদক সেবন করে পথশিশুরা। অনেক সময়ই তাদেরকে আমরা নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয় না। তারা বলে, ড্যান্ডি ব্যবহার করে ক্ষুধা লাগে না ৫-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। আর এ কারণেই এই মাদক তারা সেবন করে।

ভাসমান মাকদসেবীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও সমাজের আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ জরুরি। মাদকাসক্ত এসব পথশিশুরাও বলছে, পড়ালেখা করে মূলধারায় ফিরতে চায় তারা। শুধু দরকার একটু সহযোগিতার হাত।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply