সরকার পতনে চলতি মাসেই একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল। তবে এখনও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। ২২ জুলাই ঢাকায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের আগে বা পরে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জানালেন এসব তথ্য। গত ৬ জুলাই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। এই বৈঠকের পর রাজধানীতে কল্যাণ পার্টির প্রধান কার্যালয়ে যমুনা নিউজকে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
সমাবেশ নাকি সংবাদ সম্মেলন থেকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে— এমন প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেননি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিশুক নজিব।
যমুনা নিউজ: সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধিদের সফর রয়েছে বাংলাদেশে। তাদের সফরের সাথে আপনাদের প্রস্তাবনার বা আন্দোলনের সময়কালের কোনো সংযোগ আছে কি?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: না, এগুলো সম্পর্কিত না। তারা সমাবেশ বা সংবাদ সম্মেলন দেখতে আসছে না। তারা সামগ্রিক একটা পরিস্থিতি দেখতে আসছে। তারা সরকারের সাথে একটা বোঝাপড়া করবে। সেখানে মুখ্য ভূমিকায় তো সরকার বনাম বিদেশিরা। এই মুখ্য ভূমিকায় বিরোধী শিবিররা থাকবে না। বিরোধী শিবির বলতে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ আপামর জনসাধরণ। হয় এরা শুভাকাঙ্ক্ষী নয়তো কর্মী। এদের মনোভাব বিদেশিরা জানে।
”আমরা আশা করি, দেশের রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আমার আবেদন হচ্ছে, কথা বলতে হবে। পারস্পরিকভাবে আলোচনা হলে হয়তো সমাধানের দিকে আগাবে। কেউ কারও সাথে কথা না বললে সমাধান তো হবে না। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটা আলোচনা কোনো না কোনো সময় হবে। অদূর ভবিষ্যতে তা হবে।”
যমুনা নিউজ: আপনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলছেন। বিরোধীদের কাছে জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূল ইস্যু। আওয়ামী লীগ বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফেরা সম্ভব নয়। তারা যদি এ সিদ্ধান্তে অটল থাকে, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: আমাদের তো আন্দোলনের বিকল্প নেই। বিকল্প খুঁজতে হবে সরকারকে, বিরোধী দলের দাবি কীভাবে তারা মেটাবেন?
যমুনা নিউজ: এই আন্দোলন কী জ্বালাও-পোড়াও অর্থাৎ সহিংস নাকি অহিংস আন্দোলন হবে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: অবশ্যই অহিংস আন্দোলন হবে। আমরা অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করি। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজপথে আন্দোলন করবো।
যমুনা নিউজ: আপনাদের আন্দোলন সভা-সমাবেশ, মিছিলের মধ্যে থাকবে না কি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: সভা-সমাবেশ, মিছিল তো বটেই। হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হবে কি না তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
যমুনা নিউজ: সরকার আপনাদের দাবি না মেনে যদি যথাসময়ে নির্বাচন করে, এক্ষেত্রে বিকল্প ভেবেছেন কিছু?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি, বয়কট নাকি প্রতিহত করবো। তবে, কল্যাণ পার্টি ও ১২ দলীয় জোট এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না।
যমুনা নিউজ: সরকারের এই মেয়াদের শেষ সময়ে বিদেশি কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিরোধী শিবিরের অনেকে দাবি করছেন, সরকার ভূ-রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। যদিও বিদেশিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে জোরালোভাবে কিছু বলছে না। যারা সরব তাদের দেশেও এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্য ইইউতে দেয়া তাদের চিঠিতে এ বিষয়ে লিখেছেন। বাংলাদেশের যারা বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী, তারা বলতে চাচ্ছেন, আগামীতে এ দেশে একটা সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। তারা মুখ ফুটে বলুক বা না বলুক, তারা নিজেরাও বুঝে, বাংলাদেশের মতো দেশে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা অন্তর্নিহিতভাবে ধরে নিতে হবে, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সরকারের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় তাদের (বিদেশি) যে চাহিদা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তারা বলুক বা না বলুক, এটা তাদের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলে আমরা মনে করি।
যমুনা নিউজ: সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দলের একদফা আন্দোলনের যে ঘোষণা আসতে যাচ্ছে, এর সঙ্গে কি জামায়াত যুক্ত থাকবে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: জামায়াত সুসংগঠিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। তারা ইতিবাচকভাবে আন্দোলনে আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অন্যরা তাদের ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করবে।
যমুনা নিউজ: ‘একজন জাতীয় বীরের প্রতীক্ষায় আছি’ জানিয়ে আপনার বই বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা ও পরাজিত নাগরিক-এ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। আপনাদের একদফার আন্দোলনে এমন কোনো নেতা কি তৈরি হবে, যার প্রতীক্ষায় আছেন?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: সংকটেই বীর তৈরি হয়। আমি বিশ্বাস করি, এই সংকট বা আন্দোলন থেকে তেমন একজন জাতীয় বীর আসবেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছি, রাজনৈতিক সংকটেও কেন নেতৃত্ব দিতে পারবো না? বাহির থেকে এসে কেউ এখানে নেতৃত্ব দেবে না।
যমুনা নিউজ: আন্দোলন সফল হলে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলটি ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে’ ২৭ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ১২ দলীয় জোট বা কল্যাণ পার্টির রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে কোনো প্রস্তাবনা কি আছে?
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম: পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি স্লোগান নিয়েই কল্যাণ পার্টির জন্ম হয়। আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, আমাদের দাবির ১৪ বছর পর আমাদের আন্দোলনের অন্যতম শরীক দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে। বিএনপির ২৭দফার সারমর্ম হলো রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই। গুণগত পরিবর্তন না হলে এই ২৭দফা বাস্তবায়ন কোনো দিনই সম্ভব না। আমরা এটা ১৫ বছর আগে থেকে বলে আসছি। আমরা বলে আসছি, নির্বাচন কমিশন আইন বদলাতে হবে, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং আমরা ভৌগলিকভাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ চেয়েছি, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ চেয়েছি।
Leave a reply