বিশাল শতক হাঁকিয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে যখন সাজঘরে ফিরছেন রাহমানুল্লাহ গুরবাজ, ততক্ষণে আফগানিস্তানের স্কোর ৩৬.১ ওভারে ২৫৬ রান! বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়ানো আফগান ব্যাটাররা এই মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে স্কোরকে সাড়ে তিনশো-চারশোর ঘরে নিয়ে যাবেন, এমন ভাবাটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে এরপর বাংলাদেশকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছে বোলাররা। নিয়মিত উইকেটের পতনের সাথে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের রানকে ৩৩১’র বেশি যেতে দেয়নি লিটন দাসের দল। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে ৩৩২ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য কঠিন হলেও একদমই অসম্ভব নয়। তবে এই রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে হলে নিজেদের রেকর্ডও নতুন করেই লিখতে হবে বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহিম জাদরান। শুরুতে জাদরান একটু ধীরগতিতে খেললেও বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন আরেক ওপেনার গুরবাজ। যার ফলে ম্যাচের ১৪ ওভারের মাথায় মূল পাঁচ বোলারকেই আক্রমণে আনতে বাধ্য হন এই ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া লিটন কুমার দাস। কিন্তু দলকে উইকেট এনে দিতে পারেননি কোনো বোলারই।
১৩ তম ওভারে সাকিব আল হাসানকে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই ছক্কা মেরে ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ। এরপর মাঠের চারপাশে বাউন্ডারি- ওভার বাউন্ডারির পশরা সাজিয়ে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপকে অসহায় দর্শক বানিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পান ডানহাতি এই ওপেনার ব্যাটার। ১০০ বলে ৮ টি চার ও ৬ টি ছক্কার সাহায্যে ম্যাজিকাল ফিগার স্পর্শ করেন এই আফগান ব্যাটার। গুরবাজের এই ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়ে সেঞ্চুরির পর। বিনা উইকেটেই ৫০ ওভার খেলে ফেলে কিনা, সেই শঙ্কা যখন জাগতে যাচ্ছে তখনই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। এই তারকা অলরাউন্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ১৩টি ৪ ও ৮টি ছয়ের সাহায্যে ১২৫ বলে ১৪৫ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা গুরবাজ।
এক প্রান্তে ইবরাহিম জাদরান ছিলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে একের পর এক উইকেটের পতন ঘটায় বাংলাদেশ। আফগানদের রানের ঝড়ো গতিও কমে আসে। পরবর্তী ৫০ রানে ৬ ও ৬৩ রানে আফগানদের ৮ উইকেটের পতন ঘটে। এর মাঝেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন অনেকটা সময় গুরবাজের ছায়া হয়ে থাকা জাদরান। শতক পূর্ণ করার পরই মোস্তাফিজের শিকার হন এই ডানহাতি ওপেনার। শেষ ১৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৭৫ রান তুলতে পেরেছে আফগানরা। সাকিব আল হাসান, মেহেদী মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।
গুরবাজ ও জাদরানের ব্যাটে আজ হয়েছে রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা। তাদের ২৫৬ রানই আফগানিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ জুটি। তাছাড়া, একই ম্যাচে দুই আফগান ওপেনারের শতক হাঁকানোর ঘটনাও এটিই প্রথম। দলীয় সংগ্রহের দিক দিয়েও ৩৩১ আফগানিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাছাড়া, রাহমানুল্লাহ গুরবাজের ১৪৫ রান আফগানিস্তানের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। রেকর্ড গড়ে ম্যাচ জেতার অনুপ্রেরণা বাংলাদেশ তাই পেতে পারে আফগান ওপেনারদের দেখেই।
/এম ই
Leave a reply