আলমগীর হোসেন:
রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য এজেন্ট নিয়োগ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ উদ্যোগ রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সুসংগঠিত প্রশাসনের বাইরে এজেন্টের মাধ্যমে রাজস্ব আয় কতটা বাড়ানো সম্ভব হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ পদ্ধতি চালু হলে করদাতাদের হয়রানি বাড়বে বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
এর আগেও রাজস্ব বাড়ানোর নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলে তা খুব একটা কাজে আসেনি। দেশে ৮৮ লাখ টিআইএন নিবন্ধনকারী থাকলেও গত অর্থবছরে আয়কর জমা দিয়েছেন ৩২ লাখেরও কম।
এদিকে, করদাতার সংখ্যা বাড়াতে এজেন্ট নিয়োগের জন্য ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপেয়ার (টিআরপি) বিধিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূলত এটির মাধ্যমে নতুন করদাতার রিক্রুটমেন্টকে আউটসোর্সিং করা। আমাদের এত বড় প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা যে কাজটি করতে পারেননি; একই প্রশাসন ও নীতির মধ্যে থেকে আউটসোর্সিং ট্যাক্স এজেন্টরা তা কীভাবে করবে?
এনবিআর এর সাবেক সদস্য ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এটার ফলে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি হবে। কতগুলো পটকা লোক আসবে। তারা দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকেরাও চলে আসতে পারে এতে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, রাজস্ব প্রশাসনে সুশাসনের ঘাটতি আছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। করদাতার হয়রানি আরও বাড়েবে বলে মত তাদের।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাইরের একজনকে নিয়োগ দিয়ে তাকে বলা হলো, যত কর আদায় করা যাবে এর একটি ইনসেনটিভ পাবা। করহার ও করদাতা বাড়ালে এজেন্টের ইনসেনটিভ আছে। সেখানে জবাবদিহিতার জায়গাটা কোথায়? নিয়ম মেনে করদাতার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে নাকি নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাপ সৃষ্টি করে কর আদায় করা হবে।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, আমার ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দারুণ সমস্যা সৃষ্টি করবে এই প্রক্রিয়া। এই শ্রেণিটা (এজেন্ট) হবে লেনদেনের একটা মাধ্যম। পটকবাজি করবে, আয় করবে এবং মানুষকে হয়রানি করবে।
পদ্ধতিগত পরিবর্তন ছাড়া করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আয় কোনোটাই বাড়ানো সম্ভব নয় বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
উল্লেখ্য, দেশে কর জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশেরও নিচে। যা আশেপাশের যেকোনো দেশের তুলনায় কম। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রতি অর্থবছরে দশমিক ৫ শতাংশ কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
/এমএন
Leave a reply