দু’ভাগে বিভক্ত গণঅধিকার পরিষদ; অস্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রহীনতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা

|

নূরনবী সরকার:

প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বর্ষ উদযাপনের আগেই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যকে ঘায়েলে ব্যস্ত গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রেজা কিবরিয়া নয়, নুরুল হক নুরপন্থীরাই শেষ পর্যন্ত টিকে যেতে পারেন। তবে এই দল সাইনবোর্ড সর্বস্ব হবে নাকি সবলভাবে টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে আগামী দিনে জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ অস্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রহীনতার কারণেই দলটিতে তৈরি হয়েছে এক নেতার আধিপত্য নির্ভরতা। দলটির সংকটের কারণও এটাই।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে এসে ‘সফল’ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর। পরের বছরই ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানার থেকে ডাকসুর ভিপি হন তিনি। নির্যাতন, মামলা, হামলায় সহমর্মিতা পাওয়া নুর ২০২১’এ গঠন করেন গণঅধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল। ২০২২ সালে যোগ দেন আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, জোনায়েদ সাকি ও সাইফুল হকদের মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’। বছর না ঘুরতেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসে নুরের দল।

সম্প্রতি নিজ দলের ভেতর থেকেই নুরের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টের সাথে বৈঠকের অভিযোগ ওঠে। দলে দেখা দেয় বিভক্তি। একদিকে রেজা কিবরিয়া, অন্যদিকে নুর। পাওয়া হয়নি ইসির নিবন্ধনও। শেষমেশ নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকেও উচ্ছেদ হতে হয় গণঅধিকার পরিষদের নুরপন্থীদের।

এ ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক বলেন, সব বিষয়ে যদি তারা স্বচ্ছতা সামনে নিয়ে আসতে পারতেন, দলের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখতেন তবে আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ এবং অনভিজ্ঞদের সমন্বয় করতে গণঅধিকার ব্যর্থ হয়েছে। সমন্বয়ের অভাবেই দলটি আজকের এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিন বলেন, গণঅধিকার পরিষদে নানা ধরনের অসততা, অস্বচ্ছতা এবং নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব যখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন আমি বলবো, স্পষ্টতই নুরুল হক নুর ও রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন যে দল গঠিত হয়েছিল তা আসলেই রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠতে পারেনি।

রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসম্পৃক্ত নেতৃত্ব এবং আরও বেশি কর্মী তৈরি করতে পারলে টিকে থাকতে পারে নুরের গণঅধিকার পরিষদ। ড. জোবাইদা নাসরিন বলেন, দলটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে, এই মুহূর্তে এমনটি বলা কঠিন। একক দল হিসেবে এখন নুরের টিকে থাকা কঠিন হবে। কারণ, সমর্থন তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নুর যে প্রক্রিয়ায় নিজেকে তৈরি করেছিলেন সেটাকে একভাবে দেখলে বলা যায়, তাতে ঐতিহাসিকতা আছে।

ড. মারুফ মল্লিক বলেন, গণঅধিকার পরিষদে ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন যারা আছে তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার বা শক্তিশালী ভূমিকা রাখার খুব একটা সুযোগ আছে বলে মনে করি না। কেননা, তাদের অধিকাংশই পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ নন। তারা একটি রাবার-স্ট্যাম্প সর্বস্ব দল হবে নাকি, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে- নুর কিংবা গণঅধিকার পরিষদের সামনে দু’টি রাস্তাই খোলা আছে।

বড় দুই দলে জোটবদ্ধ থেকে আন্দোলন বা ক্ষমতার স্বাদ নেয়া বাংলাদেশের অধিকাংশ ছোট দলের রাজনৈতিক বাস্তবতা। সেখানে নুরের পক্ষে এই প্রথা ভাঙা কঠিন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply