করোনার মতো ডেঙ্গু বিশ্ব মহামারি না হলেও দেশে এর রোগতাত্ত্বিক মহামারি শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডাক্তার মোশতাক আহমেদ। সমন্বিত ব্যবস্থা না হলে সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার মতো মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি সচেষ্ট হওয়া জরুরি।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে গত ২২ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে আড়াইশ’ জন। চলতি বছর এই হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে চার হাজার মানুষ। যার ৪২ জন আর ফিরতে পারেনি নিজ বাসায়।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতার দেখা মিলছে কমবেশি সব হাসপাতালেই। কুর্মিটোলা, ঢাকা মেডিকেল কোথাও বেড ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে বাড়তি খরচে বেসরকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। শুধু তাই না, ডেঙ্গুতে এবছর ঢাকার বাইরেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। মারা গেছেন অন্তত ৩৫ জন।
এ নিয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, কলেরা-করোনার মতো ভয়াবহ না হলেও ডেঙ্গু সারাদেশে রোগতাত্ত্বিক মহামারিতে পরিণত হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহই নেই। তাই এই বিবেচনায় কাজ করলে ডেঙ্গু মোকাবেলা আরও সহজ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মত, মহামারির মতো গুরুত্ব পাচ্ছে না ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণ। সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও এতে সম্পৃক্ত করা যায়নি সাধারন মানুষদের। সমন্বিত সরকারি ব্যবস্থায় ঘাটতি আছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, অনেক সময় ডেঙ্গুতে খুবই সামান্য পরিমাণে জ্বর দেখা দেয়। ফলে মানুষ সাধারণ জ্বরের ওষুধ খেয়েই নিরাময় পেতে চায়। তাই বেশিরভাগ রোগীর ধরাই পড়ে না যে তাদের ডেঙ্গু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মশা যাতে না কামড়ায়, সেই ব্যবস্থা আগে করতে হবে।
এর আগেও এনোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ছিল বাংলাদেশে। কিউলেক্স বাহিত ফাইলেরিয়াও কম ভোগায়নি। পুরোপুরি নির্মুল না হলেও রোগ দুটি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস বাহিত ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আরও সচেষ্ট হওয়া জরুরি।
আইইডিসিআর উপদেষ্টা বলেন, আজকের আইইডিসিআরের আগের নাম ছিল ম্যালেরিয়া ইনস্টিটিউট। কাজেই মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কেন্দ্র দরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
জনসাধারণ পর্যায়ে আরও সতর্কতা প্রয়োজন উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রমে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বারদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মসজিদের ইমাম সাহেবকে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিটি মানুষকে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনতায় অংশ নিতে হবে।
এ বছর জুলাইয়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। আগষ্টে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়ার আহ্বান তাদের।
এসজেড/
Leave a reply