নূরনবী সরকার:
ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে নয়াপল্টনে কাল (২৭ জুলাই) বিএনপির মহাসমাবেশ। একই দিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের সহযোগী তিনটি সংগঠন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা দেশের মানুষের পাশে থাকবেন। আর বিএনপি বলছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ, সংঘাত নয়; আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানই গণতন্ত্রের শিষ্টাচার।
লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। গত ১২ জুলাইয়ের ঢাকায় সমাবেশ থেকে ‘এক দফা আন্দোলনের’ ডাক দিয়েছিল দলটি। তারপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ। সেখান থেকেই ২৭ জুলাই ফের ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। মাত্র ২ সপ্তাহের ব্যবধানে কেন আরেকটি মহাসমাবেশ হতে যাচ্ছে, তাই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটাবো। আওয়ামী লীগই আরেকটি সংঘাত সৃষ্টির জন্য এক কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি সমাবেশ আহ্বান করেছে। তারা যদি দেশপ্রেমী হতো, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হতো, তাহলে তারা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির পরদিন সমাবেশ ডাকতে পারতো। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আমাদের উপর দোষারোপের চেষ্টা করবে।
আওয়ামী লীগ চায় বিদ্যমান ব্যবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন। তাই কাল মাঠে থাকবে তারাও। এজন্য যুবলীগের ২৪ তারিখের সমাবেশ পিছিয়ে দেয়া হয়। তাদের সাথে যৌথভাবে বায়তুল মোকারমের উন্নয়ন সমাবেশে থাকবে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও। তাদের লক্ষ্যও বড় শোডাউন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না কিন্তু সরকারের পতন ঘটাবে। এটা কী? সরকারের পতন কীভাবে ঘটাবে, নির্বাচন ছাড়া? বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যদি বন্ধ করতে হয় তবে সেটা কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একা পারবে? জনগণের প্রয়োজন আছে না? দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আছে না? আমরা যদি সতর্ক অবস্থানে না থাকি, যদি পাহারাদারের ভূমিকা পালন না করি, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার চেষ্টা না করি তাহলে দেশকে ক্ষতি হওয়া থেকে কে রক্ষা করবে?
বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষে পরোক্ষ অবস্থান নিয়েছে চীন-রাশিয়া। এই অবস্থায় নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। এর সমাধান কোথায়? সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ বলে যদি আমরা দাবি করতে চাই তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনার সুযোগ থাকতে হবে। এখানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কোনো সুযোগ নেই। এটা উসকানিমূলক। এর মাধ্যমে সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি গত ৫২ বছরে। এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো। জনগণের কথা চিন্তা করে, দেশের ভবিষ্যত চিন্তা করে সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে রাজপথের সহিংসতা দেখেছে দেশবাসী। এর ফলে, রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল সমাধানের পথ। সেই পুনরাবৃত্তি বন্ধে রাজনীতিকদেরই বিবেচনাপ্রসূত আচরণের আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
/এম ই
Leave a reply