এক মাসে ডেঙ্গু টেস্ট কিটের চাহিদা বেড়ে ১০ গুণ, আমদানিতেও জটিলতা

|

তৌহিদ হোসেন:

ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট আমদানি নিয়ে জটিলতা চলছে। এক মাসে হঠাৎ প্রায় ১০ গুণ চাহিদা বেড়েছে। অথচ স্বাস্থ্য সরঞ্জামের জন্য এলসি খুলতে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক। ঋণপত্রের শতভাগ অর্থ আগাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে এভাবে চললে পুঁজি নিয়ে বিপদে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি শুল্কের হার নিয়ে আরও বিপত্তি বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

গত কয়েক সপ্তাহে দেশে নতুন করে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। জ্বর হলেই মানুষ আতঙ্ক নিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসকের কাছে। রক্ত পরীক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। আগের চেয়ে রোগের লক্ষণ বদলে যাওয়ায়, ঝুঁকি নিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। পরিস্থিতি বুঝে ডেঙ্গু টেস্ট দেয়া হচ্ছে। তাই শনাক্তকরণ কিটের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।

বিপুল পরিমাণে চাহিদার তুলনায় যোগান কম উল্লেখ করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ক্রমাগত ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সে অনুযায়ী আমাদের অন্যান্য যোগান বাড়ছে না। অন্যদিকে আমাদের হাসপাতালের প্যাথোলজিতে প্রতিদিন ৩০০ রোগীর পরীক্ষা করা যায়। একেক রোগীর জন্য দিনে ৫-৭টি টেস্টের হিসেব করে দিনে ২০০০ পর্যন্ত টেস্ট করা হয় স্বাভাবিক সময়ে, সেখানে বৃহস্পতিবার ১২০০ এরও বেশি রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট আমদানি করে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। মূল চালান আসে ভারত ও চীন থেকে। অ্যাকুরেট, ওয়ানফো ও বায়োলাইন ব্র্যান্ডের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেশী দেশ থেকে বেশি আসে অস্কার, মেরিল ও এসডি বায়োসেন্সরের কিট। প্রতি পিসের দাম ওঠানামা করে ৬০ থেকে দেড়শ’ টাকার মধ্যে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, হঠাৎ এত কিটের চাহিদা হবে, তা তারা বুঝতে পারেনি।

এ নিয়ে ল্যাব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শেখ শফিকুল আলম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কিটের চাহিদা যেখানে ১০ হাজার ছিল, সেটি এখন ১ লাখ হয়ে গেছে। সুতরাং আজ ১ লাখ কিট কিনলে আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, যা আগে ২ মাস সময় লাগতো বিক্রি হতে।

একইভাবে এফ এস সার্জিক্যালের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম জানালেন, সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাহিদা তাতে সেই পরিমাণে যোগান দেয়া যাচ্ছে না। চাহিদা এখন এতই বেড়েছে, যে পরিমাণ কিট ছয় মাসের জন্য কিনতেন ব্যবসায়ীরা তা শেষ হয়ে যাচ্ছে মাত্র কয়েক সপ্তাহেই। এতে দাম না বাড়লেও এলসি জটিলতায় চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।

এ বিষয়ে বিএমএ ভবন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু কিট আমদানি করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে এ ক্ষেত্রে ট্যাক্স-ভ্যাট কমানো দরকার। ৩০-৩৫ শতাংশের স্থানে যদি শুল্ক ১০-১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় এবং এলসির ব্যাপারে দেশের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ব্যাংক যদি আরও আন্তরিক হয়, তাহলে আরও কিট আমদানি করে বাজারে ছাড়া সম্ভব।

ডেঙ্গু মহামারি ঘোষণা হলে, আরও বেশি আমদানিকারককে কিট আমদানিতে যুক্ত করতে হবে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন তারা।

এসজেড/

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply