কামাল হোসাইন,নেত্রকোণা
বিশ্ব রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে প্রখ্যাত সাতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দূর পাল্লার একক সাঁতার প্রদর্শনী প্রায় সম্পন্নের পথে। সোমবার সকাল ৬টায় শেরপুরের নালিতাড়ি উপজেলার ভোগাই নদীর ব্রিজ থেকে সাঁতার শুরু করেন তিনি। টানা (বিরামহীন) তিনদিনে ভোগাই, নেতাই, কংস ও মগড়া নদী পাড়ি দেয়ার পর বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) নেত্রকোণার মদন উপজেলার দেওয়ান বাজারে মগড়া নদীর ঘাটে এ প্রদর্শনী শেষ হবার কথা রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য গত বছরের (২০১৭) আগস্ট মাসে মাত্র ৪৩ ঘন্টায় ১শ ৪৬ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতে যাচ্ছেন তিনি।
৬৭ বছর বয়সী প্রবীণ এ সাঁতারু জানান, গিনেজ রেকর্ড বুকে স্থান পেতে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তিনি। বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শনী চলাকালে এক মিনিটের জন্যও কোথাও থামবেন না। নদীতে সাঁতার অব্যাহত রেখেই গ্রহণ করবেন তরল জাতীয় খাবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি নেত্রকোণার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। ১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুুকরে সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘন্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন। পরে একই বছর মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে ১৫ ঘন্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে প্রথম আলোচিত হন।
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘন্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘন্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘন্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘন্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথহলের পুকুরে ৯৩ ঘন্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড করেন। জাতীয় রেকর্ড ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১শ ৮ ঘন্টা ৫ মিনিটব্যাপী সাঁতার প্রদর্শন করে পুরাতন রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুরে পাড়ে একটি স্মারক (ফলক) নির্মাণ করে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোণা পৌরসভার পুকুরে তাঁর একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতেরও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘন্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গিপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন তিনি।
সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে গণভবনে ডেকে রূপার নৌকা উপহার দেন। একই বছর ডাকসু তাঁকে বিশেষ সম্মাননা সূচক স্বর্ণপদক দেয়। এছাড়াও জগন্নাথ হল কর্তৃপক্ষ দুই বার এবং শামছুন্নাহার হল কর্তৃপক্ষ একবার তাকে সংবর্ধনা ও স্বর্ণপ্রদক প্রদান করে। এছাড়াও বহু সংগঠন পুরস্কৃত করে তাঁকে।
মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক (সাবেক মেয়র) দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক জানান, এই কৃতি সাঁতারুর ১৮৫ কিলোমিটার বিরামহীন সাঁতারের রের্কড গড়তে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়-তারিখ নির্ধারিত ভিডিও ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজ রাখা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার বোগাই নদীতে সোমবার সকাল ৬টায় সাঁতার শুরু করে মঙ্গলাবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নেত্রকোণা সদর উপজেলা বড়ওয়ারী ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করতে পেরেছেন। বাকী পথ বুধবার বিকেলের মধ্যে অতিক্রম করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে,মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ি পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সাঁতার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নালিতাবাড়ি পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক ও মদন উপজেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক (সাবেক মেয়র) দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক।
Leave a reply