ডিএসএ’র নাম পরিবর্তন, নতুন আইনে সংশোধন আসছে বিভিন্ন ধারায়

|

সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিএসএ) নাম পরিবর্তন এবং বেশ কিছু ধারা সংশোধন করে আইনটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিএসএ বাতিল নয়, এই আইনের বেশ কিছু ধারা ও নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে সংসদে উঠবে সাইবার নিরাপত্তা আইন। আইনটি পাশ হলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে করা মামলাগুলো নতুন আইনে চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক জানান, কারও সন্তষ্টির জন্য ডিএসএ এর নাম পরিবর্তন ও ধারা সংশোধন করে নতুন আইন করা হচ্ছে না। সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানিকর মামলায় সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ হবে। কারণ, মানহানির মামলায় কারাদণ্ডের বিধান থাকছে না। কারাদণ্ডের বদলে জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। জরিমানা না দিলে কারাদণ্ড দেয়া হবে। নতুন আইনটিতে অজামিনযোগ্য ধারা পরিবর্তন হচ্ছে।

নতুন আইনে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যেসব ধারায় সংশোধন আসছে সেগুলো নিয়ে এ সময় কথা বলেন আইনমন্ত্রী। জানান, কোন ধারা বহাল কিংবা বাদ দেয়া হয়েছে।

⚫ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিচার করা হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করেন, তার জন্য তিনি অনধিক তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নতুন আইনে মানহানির মামলায় কারাদণ্ডের বদলে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অনাদায়ে ৩ বা ৬ মাসের কারাদণ্ড। এ সাজা শুধুমাত্র জরিমানা না দিতে পারলেই ভোগ করতে হবে।

⚫ ডিএসএ এর ২১ ধারায়ও যে শাস্তির বিধান ছিল তা পরিবর্তন আসছে নতুন আইনে। ডিএসএ এর ২১ ধারার এক নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটালমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

এক্ষেত্রে দশ বছরের বদলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর। এছাড়া এই ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের ধারাও বাতিল হচ্ছে।

⚫ নতুন আইনে ডিএসএর ২৮ ধারায় সাজা কমিয়ে ২ বছর করা হয়েছে। একইসঙ্গে জামিনযোগ্য করা হযেছে। ডিএসএ এর ২৮ ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

এই ধারার ২ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

⚫ সাইবার নিরাপত্তা আইনে ডিএসএর ৩১ ধারায় সংশোধন আসছে। সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের জায়গায় ৫ বছর হবে।

৩১ ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

এই ধারার ২ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১ এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
৩ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

⚫ ডিএসএ এর ৩২ ধারায়ও সংশোধনী এসেছে। সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর থেকে ৭ বছর করা হয়েছে।

৩২ ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি Official Secrets Act, 1923 (Act No. XIX of 1923 এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

আর দুই নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ১(এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

⚫ নতুন আইনে ডিএসএ এর ৩৩ নম্বর ধারা বাতিল করা হয়েছে। হ্যাকিংয়ের ধারা এখানে যুক্ত হবে।

৩৩ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছিল, যদি কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার বা ডিজিটাল সিস্টেমে বে-আইনি প্রবেশ করিয়া সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো আর্থিক বা বাণিজ্যিক সংস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের কোনোরূপ সংযোজন বা বিয়োজন, স্থানান্তর বা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

২ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১ এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

৩ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১৫ (পনেরো) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

⚫ এদিকে, সাইবার নিরাপত্তা আইনে ডিএসএর ৪৩ ধারা বহাল থাকবে। অর্থাৎ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা থাকছে পুলিশের। ৪৩ ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে বা সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছিয়া ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হইবার বা করিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি, অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, নিম্নবর্ণিত কার্য সম্পাদন করিতে পারিবেন—

(ক) উক্ত স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশি এবং প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হইলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া

(খ) উক্ত স্থানে তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দ করা

(গ) উক্ত স্থানে উপস্থিত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি;

(ঘ) উক্ত স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করিয়াছেন বা করিতেছেন বলিয়া সন্দেহ হইলে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার।

দুই নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, ১ এর উপ-ধারা অনুযায়ী তল্লাশি সম্পন্ন করার পর পুলিশ কর্মকর্তা তল্লাশি পরিচালনার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের নিকট দাখিল করিবেন।

⚫ সাইবার নিরাপত্তা আইনে ডিএসএর ৩০ ধারাও বহাল থাকছে। ৩০ ধারার ১ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি—

(ক) কোনো ব্যাংক, বিমা বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হইতে কোনো ইলেকট্রনিক বা ডিজিটালমাধ্যম ব্যবহার করিয়া আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে ই-ট্রানজেকশন করেন বা

(খ) সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারিকৃত কোনো ই-ট্রানজেকশনকে অবৈধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও ই-ট্রানজেকশন করেন— তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

২ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১-এ উল্লিখিত অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

৩ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা ১-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনরায় সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘ই-ট্রানজেকশন’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তাহার তহবিল স্থানান্তরের জন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে অর্থ জমা প্রদান বা উত্তোলন বা উত্তোলন করিবার জন্য প্রদত্ত নির্দেশনা, আদেশ বা কর্তৃত্বপূর্ণ আইনানুগ আর্থিক লেনদেন এবং কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply