চীনে তীব্র বৃষ্টিতে আটকে গেলো ট্রেন, ১০৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার হাজারো যাত্রী

|

টানা বৃষ্টিতে রেললাইন বিধ্বস্ত হয়ে একটি ট্রেন আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে চীনে। দেশটির প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় সম্প্রতি ঘটে এ ঘটনা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে ১০৫ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া যাত্রীদের। খবর শিনহুয়া ও চায়না ডেইলি নিউজের।

চীনে গত ২৯ জুলাই রাত ৮টা থেকে ২ আগস্ট সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে এ রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান। এ সময় চীনের রাজধানী বেইজিং ১৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ জুলাই সকালে এক হাজার যাত্রী নিয়ে উহান ছেড়ে বেইজিংয়ের পথে যাচ্ছিলো ট্রেন ‘কে থ্রি নাইন সিক্স’। তবে ট্রেনটি শহরতলীতে পৌঁছাতেই পড়ে ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে।

ভয়ানক প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রেললাইন বিধ্বস্ত হয়। ফলে লুপোলিং স্টেশনে আশ্রয় নেয় ট্রেনটি। এ দিন বিকেলেই নেটওয়ার্ক হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টেলিযোগাযোগ। ফলে সাহায্য চাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন যাত্রীরা।

এ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে ট্রেনের কর্মীরা। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটির কন্ডাক্টর ইয়াং লং বলেন, ট্রেনে আমরা ছয়জন কর্মী ছিলাম। খাবার সংগ্রহে বৃষ্টির মধ্যেই স্টেশনের উল্টো দিকে যেতে হয়েছে। স্টেশন মাস্টার সাবধান করেছিলেন যে, উপরে ২৭ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ রয়েছে। খুব ঝুঁকিপূর্ণ আর কঠিন সময় ছিল এটি।

পরদিনও অব্যাহত ছিল তুমুল বৃষ্টি। এরই জেরে আটকে থাকা ট্রেনটির চারপাশ প্লাবিত হয়ে যায়। কাছেই থাকা একটি বাঁধের পানির উচ্চতাও বাড়তে থাকে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল বাঁধটি ভেঙে গেলেই এক তোড়ে ভেসে যেতো রেললাইন। ট্রেনেই ডুবে প্রাণ হারাতে হতো এসব যাত্রীকে।

এদিকে, বিপদগ্রস্ত ট্রেনটির সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় না পেয়ে দুঃসাহসী এক সিদ্ধান্ত নেয় জরুরি বিভাগ। সড়ক, রেল ও পাহাড়ি রাস্তায় পায়ে হেঁটেই রওনা দেয় উদ্ধারকারীদের তিনটি দল। এ উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় ৫০০ পুলিশ সদস্যও।

২ আগস্ট সকালে লুপোলিং স্টেশনে পৌঁছায় উদ্ধারকারী দলগুলো। ধাপে ধাপে সরিয়ে নেয়া হয় আটকে পড়া ট্রেনের যাত্রীদের। শুরুতে কাছাকাছি লোকালয়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাদের। খাবার, পানি ও মাথা গোজার ঠাঁই দিতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রাও। পরে ৩ আগস্ট সকালে সরানো হয় শেষ দলকে।

এ ব্যাপারে ট্রেন অ্যাটেনডেন্ট ঝাও ইয়াং বলেন, উদ্ধারকারীরা যখন প্রথম পৌঁছায়, আশার আলো খুঁজে পাই। যাত্রীদের আশ্বস্ত করলাম, আমাদের বাঁচাতে এসে গেছেন তারা। সবশেষ যাত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পর আনন্দে চিৎকার করেছিলাম।

প্রসঙ্গত, টাইফুন ডকসুরির প্রভাবে গত দু’সপ্তাহে নজিরবিহীন বৃষ্টি দেখেছে চীনের উত্তরাঞ্চল। বন্যার কবলে বেইজিং, তিয়ানজিন, হেবেই অঞ্চল। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ট্রেনের এতগুলো যাত্রীকে বাঁচাতে উদ্ধারকারী দলের দুঃসাহসিক এ অভিযান প্রশংসা পাচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply