পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে বিপাকে তিতাস-বিটিআরসি (ভিডিও)

|

ফাইল ছবি

আলমগীর হোসেন:

পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে বিপাকে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, বিটিআরসিসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ পূর্তির পরও স্থায়ী আমানতের টাকা ফেরত দিচ্ছে না পদ্মা ব্যাংক। মন্ত্রণালয় কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংককে ঘুরেও টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, ব্যাংকটি এখনো চরম তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় বড় আকারের আমানত ফেরত দেয়া সম্ভব নয়।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি- জালিয়াতির কারণে চরম সংকটে পড়ে সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। গ্রাহকের জমানো টাকাও ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকটি। সংকট কাটাতে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব চার ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবি। ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন যোগান দেয় এসব প্রতিষ্ঠান। নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয়া হয় ‘পদ্মা ব্যাংক’। এরপরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি। স্বতন্ত্র গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিলেও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত এখনও ফেরত দিতে পারছে না পদ্মা ব্যাংক।

পদ্মা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫৩ কোটি টাকা জমা রাখে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। যার মেয়াদ পূর্তি হয় ২০১৬ থেকে ১৮ সালের মধ্যে। স্থায়ী আমানত নগদায়নে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটিকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুদ-আসল কোন অর্থই ফেরত পায়নি তিতাস। টাকা ফিরে পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়েরও সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবির খান এ প্রসঙ্গে বলেন, তাদের কাছে আমরা বারবার পত্র দিয়েছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককেও পত্র দিয়েছি। একাধিকবার মৌখিকভাবে টাকাটা ফেরত দেয়ার কথা বললেও টাকাটা তারা এখনও ফেরত দেয়নি।

একই অবস্থা, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন-বিটিআরসি’ র। মেয়াদ পূর্তির পরও পদ্মা ব্যাংকের ৫ শাখায় স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ফেরত পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। টাকা ফিরে পেতে প্রায় অর্ধশত চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটিকে। বাংলাদেশ ব্যাংককেও অবহিত করার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ওই টাকাটা এখন পর্যন্ত ওরা আমাদেরকে দিতে পারে নাই। টাকা ফেরত আনার জন্য আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতাও চাইবো যাতে বিটিআরসি’র কাছে আমাদের এই পাওনা টাকা যেন আমরা উদ্ধার করতে পারি।

এছাড়াও সাধারণ বীমা, আইসিবিসহ, জলবায়ু তহবিলের অর্থসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে পদ্মা ব্যাংকে। আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনই বড় অংকের আমানত ফেরত দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০২৬ সাল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বলেন, এই পিরিয়ডে বড় অ্যামাউন্টের টাকা আমরা দিতে পারবো না। ২০২৬ এর জানুয়ারি থেকে আমরা একটা রি-পেমেন্ট প্ল্যান দেবো। প্রথমে কিস্তি একটু ছোট পরিসরে শুরু করবো পরে বড় অ্যামাউন্টে আমরা টাকাগুলো দেবো। তিতাসের সাথে আমরা কথা বলেছি, বিটিআরসি’র সাথেও কথা বলেছি। সবাই বলছে এখনই টাকা দিতে। সত্যিটা হলো, এখন ব্যাংক টাকা দেয়ার মতো অবস্থায় নাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্মা ব্যাংকের প্রতি এখনো সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরেনি। আস্থা ফেরা ছাড়া কারো আমানত ফেরত দেয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিআইবিএম এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, যেহেতু ডিপোজিট মনিটাইজেশন হচ্ছে না সেহেতু লেন্ডিংও হচ্ছে না। আর লেন্ডিং না হলে তো আয়ও হবে না। আর আয় না হলে তো আপনি রিস্ট্র্যাকচারের কিছুই করতে পারবেন না। এটাই এখন মূল সমস্যা। জনগণের আস্থা যে কতো বড় ব্যাপার পদ্মা ব্যাংক তারই একটা উদাহরণ। গভর্নমেন্ট আগায়ে আসলো, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো টাকা দিলো তারপরও ব্যাংকটা ঘুরে দাঁড়াতে পারলো না।

ঋণের নামে ব্যাংকটি থেকে যে অর্থ বেরিয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনতে জোরালো উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন বিশ্লেষকরা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply