দিল্লির বার্তায় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ; সরকার ও বিরোধী দলের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া

|

আহমেদ রেজা:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। ১৮ আগস্ট ভারতের গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর দেশের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে তৈরি হয়েছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। বিএনপি মনে করে, কোনো বহিঃশক্তি নয়, জনগণই ক্ষমতার উৎস। আর সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় ভারতের এমন পদক্ষেপ ইতিবাচক।

এ নিয়ে যমুনা টেলিভিশনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায়ে ভারতের এমন অবস্থান ইতিবাচক। বাইডেন প্রশাসনও ভারতের এই অবস্থানকে স্বাগত জানাবে বলে মনে করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবং তারা (ভারত) এই বিষয়টি তুলে ধরেছে। এটা শুধু আমাদের জন্য না, পুরো অঞ্চলের জন্যে খুবই ইতিবাচক হবে। আর, যারা এখানে অশান্তি সৃষ্টি করতে চান তাদের জন্যও ভালো একটা রিকমেন্ডেশন দিয়েছে যে, অশান্তি সৃষ্টি করলে আপনাদেরই ক্ষতি।

এদিকে, বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের এ সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। বিষয়টি নিয়ে সরকার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে বলে মত তার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কোনো দেশ যদি তাদের (আওয়ামী লীগ) সমর্থন করে তবে তারা চেষ্টা করে এগুলোকে মূলধন করে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য। এটা তাই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন। বাইরের যেসব গণতান্ত্রিক দেশ আছে, গণতান্ত্রিক সংগঠন আছে তারা যদি জনগণের আন্দোলনকে সমর্থন করে তবে জনগণ উজ্জীবিত হয়। কিন্তু সেটার ওপর তো আর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. সাহাব এনাম খান অবশ্য মনে করেন, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নতুন কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে না। বরং, বাইডেন প্রশাসনের সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আরও গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন তিনি। ড. সাহাব এনাম খান বলেন, এই মুহূর্তে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারত, বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন অবস্থা নিয়ে যথেষ্ট রকমের চিন্তিত। এই চিন্তিত হবার কারণেই তারা নিজেদের অবস্থানকে পরিষ্কার করলো। আমার মনে হয়, এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখা প্রয়োজন। সরাসরিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের সাথে তৃতীয় পক্ষকে বাদ দিয়ে আলোচনা করছে। সেখানে আমার মনে হয় না, গুণগত কোনো পরিবর্তন আসবে। কিন্তু, এটার কিছুটা ভূমিকা তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও থাকবে।

জাতীয় স্বার্থ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন ড. সাহাব। বিদেশিরা নির্দিষ্ট কোনো দলের পক্ষে কথা বললে ভালো আর বিপরীতে গেলে তাদের মন্তব্যের মূল্য নেই- এমন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও আপত্তি আছে তার। এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেছেন, ভারত তার জাতীয় স্বার্থের জন্য যা ভালো সেটাই করবে। আবার, যুক্তরাষ্ট্রও তা-ই করবে। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে বক্তব্যগুলোকে নেন, সেটা তাদের রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply