৫ বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে ৪শ’ গুণ

|

আখলাকুস সাফা:

৫ বছরে ৪শ’ গুণ বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা লাখের বেশি, মৃতের সংখ্যা ৫শ ছুঁইছুঁই। পরিস্থিতি এমন হবে, তা আগে থেকেই সরকারকে জানানো হয়। তাহলে নিয়ন্ত্রণে কী করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো?

বিশ্লেষকদের মতে, মশা নিধনের নতুন প্রকল্প, বাজেট ও জনবল নিয়ে যতটা ব্যস্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ, ততটা গুরুত্ব পায়নি এর কারিগরি দিক। তাই ডেঙ্গু এখন সারা বছরের অসুখ।

এদিকে, হাসপাতালগুলোতে এখন তিল ধারণের জায়গা নেই। সরকারি বড় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে ৩ থেকে ৪শ’। গত ১ মাসে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১১ জন। মৃতদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। এবার ডেঙ্গুর শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে সব বয়সীরা।

এ বছর জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। জুলাইয়ে এতো রোগী আর মৃত্যৃ আগে দেখেনি দেশ। আগস্টের ২১ দিনেই আক্রান্ত ৫০ হাজারের বেশি রোগী। ৮ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন লাখের বেশি।

এ বছর বৈশিষ্ট্য বদলেছে এডিস মশার। পাল্টে গেছে রোগের ধরন-উপসর্গ। চিকিৎসায় যোগ করতে হয়েছে নতুন কৌশল। তারপরও থামানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ।

যদিও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন মশা নিধন এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো।

কীটত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে হইচই বন্ধ হয়ে গেলেই তারা থেমে যায়। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম রয়েছে। তারা দায়িত্ব বেসরকারি খাতেও দিচ্ছে না। যার ফলে জনগণ ভোগে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডাক্তার বে-নজির আহমেদের বিশ্লেষণ, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি। নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করছে, তারা বারবার কারিগরি দিকটাই এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আমাদের সবখানেই কারিগরি দিকটা অনুপস্থিত। কারিগরি দিক যতো জানবো, যতই ইকুইপ্ট হবো, ততই ভালনারেবল জায়গা সম্পর্কে জানবো। তখন ইন্টারভেনশন নেয়া যাবে, পরিস্থিতির উন্নতি করা যাবে। এ রকম কর্মপরিকল্পনা যদি না নিই, ২৩ বছরেও উন্নতি হয়নি ডেঙ্গু পরিস্থিতির, ভবিষ্যতে ২৩ বছরেও একই রকম থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম প্রতিদিন ডেঙ্গুর তথ্য সংগ্রহ করে। যাদের তথ্য নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতি শুক্রবারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে এই দিনে রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কম থাকে। আর তাতে প্রশ্ন, শুক্রবারে কী ডেঙ্গু আক্রান্ত হন না কিংবা মশা কামড়ায় না? অবশ্যই হন। কিন্তু সেই তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিফতরকে দিতে গড়িমসি হাসপাতালগুলোর। কিংবা স্বাস্থ্য অধিফতর তাদের কাছে তথ্য আনতেই পারছে না।

এই আংশিক তথ্যের দিক থেকে দেখা যায়, আগের যেকোনো বছরের রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply