এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। টাইগার ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে একপ্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও ম্যাজিক্যাল ‘থ্রি’ ফিগার ছোঁয়ার ১১ রান দূরে থেকে আউট হন নাজমুল হাসান শান্ত। শান্ত’র বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে টাইগার ব্যাটিং লাইনআপ। ১৬৪ রানেই সবকয়টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লঙ্কানদের হয়ে মাথিশা পাথিরানা নেন ৪ উইকেট।
ক্যান্ডির পাল্লেকেলে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় টাইগাররা। অভিষেকে দ্বিতীয় ওভারে এসে স্ট্রাইক পান তানজিদ হাসান তামিম। তবে প্রথম ওয়ানডেটা সুখকর হলো না তার। অফ স্পিনার মাহেশ থিকসেনার একটি বল খেলার পরই পরাস্ত হন। ভেতরে ঢোকা বল পায়ে লাগিয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হন। ২ বলে কোনো রান করতে পারেননি এই ওপেনার।
তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন নাজমুল হাসান শান্ত। শান্তকে সঙ্গে নিয়ে দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকেন আরেক ওপেনার নাইম। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন নাইম। ৩টি চারের সাহায্যে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। নাইমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
২৫ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরার চেষ্টায় ব্যর্থ হন সাকিব। ইনিংসের ১১তম ওভারে মাথিশা পাথিরানার করা অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারি কাট করার চেষ্টা করেন টাইগার অধিনায়ক। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে। বাম দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দারুণ ক্যাচ নেন কুশাল মেন্ডিস। ১১ বলে ১ চারে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
এরপর ক্রিজে আসেন তাওহিদ হৃদয়। তরুণ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করতে থাকেন শান্ত। তারা দু’জনে মিলে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন। পয়েন্ট দিয়ে দাসুন শানাকা বলে চার মেরে নিজের ৪র্থ ফিফটি উদযাপন করেন বাংলাদেশি ব্যাটার শান্ত। এর দুই বল পরই হৃদয়কে ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক। শানাকার করা এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি ফিল্ড আম্পায়ার জয়ারামান মদনগোপাল। রিভিউ নিয়ে নিজের পক্ষে রায় পান শানাকা। ৫৯ রানের জুটিতে হৃদয় খেলেন ২০ রানের ইনিংস।
হৃদয়ের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তবে এই জুটিতে ভাঙন ধরিয়েছেন পাথিরানা। এই লঙ্কান পেসারের করা ওয়াইড লেন্থের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে করুনারত্নের সহজ ক্যাচ হয়ে ফেরেন মুশফিক। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ১৩ রান।
এর আগেই একবার মুশফিকের ব্যাটে বল লেগে বল চলে গিয়েছিল উইকেটরক্ষকের হাতে। তবে আম্পায়ার ও লঙ্কান ফিল্ডারদের কেউই বুঝতে পারেননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল উইকেটরক্ষকের হাতে যাওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাটে আলতো করে ছুঁয়ে গিয়েছিল।
মুশফিক বিদায় নিলে শান্তর সঙ্গী হন মিরাজ। কিন্তু অদ্ভুতুড়ে রান আউটে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে এই টাইগার অলরাউন্ডারকে। কাসুন রাজিথার বলে লেগ সাইডে খেলেছিলেন মিরাজ, কোনো প্রকার ইতস্তত না করেই সিঙ্গেল নিতে দৌড় দেন শান্ত। তবে মিরাজ তাতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না, কয়েক ধাপ এগোলেও নিজের প্রান্তেই থেকে যান তিনি। রাজিথা যখন নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্ট্যাম্প ভাঙছিলেন তখন দুই ব্যাটারই দাঁড়িয়ে অপর প্রান্তে। তবে মিরাজের আগেই ক্রিজে ঢুকে পড়ায় রক্ষা পান সেট ব্যাটার শান্ত। মিরাজের বিদায়ে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা।
এরপর শান্তর সঙ্গী হন শেখ মেহেদী। সুযোগ পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। লঙ্কান স্পিনার ওয়েললাগের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী। তার ব্যাট থেকে আসে ৬ রান। ৪২-তম ওভারে মাহেশ থিকসেনার বলে বোল্ড হয়ে যান শান্ত। ১২২ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৮৯ রানের এক লড়াকু ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
শান্ত আউট হওয়ার পড় ২ রান তুলতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তাসকিন, মোস্তাফিজ। ৪২ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন পেসার পাথিরানা। এজন্য খরচ করেছেন মাত্র ৩২ রান। এছাড়াও থিকসেনা ২টি এবং শানাকা, ধনাঞ্জয়া, ওয়েললাগে পান ১টি করে উইকেট।
/আরআইএম
Leave a reply