মামলার জালে বিএনপি: দেড় লাখের অধিক মামলায় ৪০ লাখের বেশি আসামি

|

ফাইল ছবি।

শরিফুল ইসলাম খান:

হাবিব-উন-নবী খান সোহেল; রংপুরের এই সন্তান ঢাকার রাজনীতিতে থিতু হয়েছেন অনেক আগেই। ছাত্রনেতা থেকে ঢাকা মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পালন করছেন, হয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব। বিএনপির এ নেতার দাবি, তার নামে কমপক্ষে ৪৫১টি মামলা আছে।

হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আদালতে আইনজীবী ও বিচারপতিদের যতদিন আসতে হয়, আমারও ঠিক ততদিন আসতে হয়।

সোহেলের মতো দলটির আরও অনেকেই আছেন, যারা বছরের পর বছর ধরে আদালতের আঙ্গিনায় ঘুরছেন। বিএনপির দাবি, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল— সব মিলিয়ে দেড় লাখের বেশি মামলায় চল্লিশ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় তাদের হাজিরা দিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময় কেটে যাচ্ছে আদালতেই।

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, হঠাৎ করেই মামলাগুলোর গতি বেড়েছে। দ্রুত ফেলা হচ্ছে স্বাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ; শেষ হচ্ছে বিচারিক প্রক্রিয়াও। সম্ভাবনাময় নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকারের এই অপকৌশল বলে বিএনপির অভিযোগ।

এরইমধ্যে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাথায়ও ঝুলছে ৯ বছরের খড়গ। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ১৩ এবং ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের ৯ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দলীয় নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন । মামলার গতি-প্রকৃতি নিয়ে তিনি বললেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো সুপারসনিক গতিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর একটাই লক্ষ্য রায় দেয়া।

তবে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বললেন, মামলাগুলো নিয়মমাফিকই চলছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইমরান আহমেদ ভূইয়া বলেন, রাষ্ট্রের তো যেকোনো অপরাধের বিচার করার জন্য আগ্রহ থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। উনারা গড়পড়তা কথা বলছেন, এর তো উত্তর নেই। মামলা চলছে মামলার গতিতেই।

এদিকে, বিএনপির দাবি, কেবল মামলার গতি বেড়েছে তাই নয়, সচল করা হচ্ছে পুরনো মামলাও। উচ্চ আদালত থেকে নেতাকর্মীরা জামিন পেলেও নতুন মামলায় আটক করা হচ্ছে। আছে গায়েবি মামলার উৎপাত।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, এগুলো সরকারের একটা কৌশল, সরকারের অপকৌশল। আমাদের সম্ভাবনাময় নেতাকর্মীদেরকে আটকানোর একটা প্রক্রিয়া এটি।

ঢাকা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নিপুন রায় চৌধুরী অভিযোগ করেন, আমি দেশে নেই, তবুও এজাহারে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আবার আমাকেই এক নাম্বার আসামি করা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাদেরকে আদালতের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, মহানগর ও জেলার বিভিন্ন আদালতে মামলার চাপ বেড়েছে, পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছি।

সিলেট জজ কোর্টের সাবেক স্পেশাল পি পি মো. আশিক উদ্দিন বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার তারিখ দ্রুতই ফেলা হচ্ছে।

ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর সাত্তার বলেন, এসব মামলার অভিযোগ পড়লেই বুঝা যাচ্ছে, এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক মামলা। এতদিন সাক্ষী আসেনি, এখন দেখা যাচ্ছে সাক্ষীও নিয়ে আসছে।

দলটির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেবল নগর-মহানগর নয়, জেলা-উপজেলার পাশাপাশি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মামলার জাল।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি, মামলার কারণে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে অতিষ্ঠ তারা। ব্যহত হচ্ছে রাজনীতি, এমনকি পারিবারিক জীবন।

/এমএন

ভিডিও প্রতিবেদন:



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply