মিরাজ কি হবেন ‘আগামীর সাকিব’?

|

মিরাজ হাঁটছেন সাকিবের পথে। ছবি: বিসিবি

আল মাহফুজ:   

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করে ফেললো বাংলাদেশ। এই জয়ের পেছনে সবার অবদান থাকলেও মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর নাম উচ্চারিত হবে একটু বেশিই। কারণ, দুজনেই জোড়া সেঞ্চুরি করে দলকে একটা দারুণ সংগ্রহ এনে দিয়েছেন। দুজনেরই এটা ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শান্ত টপ অর্ডার ব্যাটার, এই মুহূর্তে দলের সবচেয়ে ইনফর্ম প্লেয়ার। তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তুলনামূলক সহজ হলেও মিরাজের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়।

মিরাজ সাধারণত ব্যাট করেন লেট অর্ডারে। সেখানে তার কাছে দলের দাবি থাকে, মারকুটে ব্যাটিং অথবা ম্যাচ ফিনিশ করে আসার। সাতে বা আটে নেমে অনায়াসে তাই বড় ইনিংস খেলা যায় না। আফগানদের বিপক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মিরাজ যখন ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করলেন, তখন অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল ভারতের বিপক্ষে গত বছর ডিসেম্বরে খেলা সেই ওয়ানডে সিরিজটার কথা। যে সিরিজকে অনেকেই ‘মিরাজের সিরিজ’ বলে থাকে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং এখনও অজস্র মানুষের মনে গেঁথে আছে। যে দুটি ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ সিরিজ জয় লাভ করে।

রশিদ-মুজিবদের বিপক্ষে মিরাজকে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে ইনিংসের শুরুতে ব্যাট করতে পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল, মিরাজ তা বুঝিয়ে দিয়েছে কড়ায় গণ্ডায়। মিরাজ সর্বশেষ ওপেন করেছিলেন এই এশিয়া কাপেই, পাঁচ বছর আগে; তাও আবার ফাইনালে। তখন সেটি ছিল সারপ্রাইজ কল বা কিঞ্চিৎ জুয়ার মতো। কারণ, ‘অলরাউন্ডার’ মিরাজের উত্থান তখনও দেখা হয়নি বিশ্বের। সেই মিরাজ আজ বুঝিয়ে দিলেন, তাকে একটু সময় দিলে তিনি কী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে আটে নেমে অবিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি করেছিলেন, তখনও তার ভয়ঙ্কর রুপ দেখেছে বিশ্ববাসী। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সেই সিরিজের কথা এখনও মনে আছে। মিরাজের আরেকটি সেঞ্চুরি দেখে প্রশংসায় মেতেছেন তিনি। মিরাজকে অভিনন্দন জানিয়ে অশ্বিন টুইট করেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে মেহেদী হাসানের উত্থান বাংলাদেশের জন্য বিরাট ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট তার ব্যাটিং সক্ষমতার মূল্য গত ১২ মাসই দিয়েছে।

ভারতের বিপক্ষে সে ম্যাচের পর এবার ওপেনিংয়ে নেমে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন মিরাজ। ব্যাটিং সামর্থ্যে ছাপ রাখলেন আরেকবার। পাশপাশি, দলের বোলিংয়ে অনেক দিন ধরেই মিরাজ ভরসার নাম। মাঝে আইসিসির ওডিআই বোলারদের র‍্যাংকিংয়ে উঠেছিলেন দুইয়ে, যে অর্জন বাংলাদেশের আর কারও নেই। ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও দুই উইকেট নিয়ে দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। আফগান ম্যাচেও পকেটে পোরেন নাজিবুল্লাহ জাদরানের প্রয়োজনীয় উইকেটটি।

মিরাজের আছে নেতৃত্ব দেয়ার সহজাত ক্ষমতা। ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বে তৃতীয় হয় বাংলাদেশ। মিরাজ নির্বাচিত হয় টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। অনেকের বিবেচনায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক তিনিই। এছাড়া, মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেন মিরাজ। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষুধা তার মাঝে সবসময় দেখা যায়। মাঠে কিংবা ক্রিজে মিরাজের নিবেদন দেখলে মাঝেমাঝে ভ্রম হয়। অধিনায়কের তকমা গায়ে না থাকলেও মনে হয়, মিরাজই কি আদতে এই দলের অধিনায়ক?

লাহোরের তীব্র গরমের প্রভাব মিরাজের শরীরে পড়লেও হাল ছাড়েননি কখনও। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছেন। আবার ফিরেছেন সাবুজ ঘাসে। মিরাজকে বোলিং করতে হবে। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে হবে। ঠিক যেন আরেক সাকিব– ব্যাটে, বলে, লিডারশিপ বা পরামর্শে দলের জয়ে অবদান রাখতে চান। মিরাজ কি এই হার না মানা মানসিকতা দলনেতার কাছ থেকেই শিখেছেন? নাকি এটা তার স্বভাবজাত? তাহলে তো বলতেই হয়– সাকিবের জ্বলজ্বলে ব্যাটন তার হাতেই উঠছে। মিরাজ হাঁটছেন সাকিব আল হাসানের পথে। নাকি সাত বছরের ক্যারিয়ারে সেই পথ পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে?

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply