আহাদুল ইসলাম:
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিজ দেখার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলা যেতে পারে, দিন শেষে প্রিয়জনের সাথে বসে কফি এবং পপ কর্ণ নিয়ে সিরিজ দেখতে বসা। অথবা সারাদিন অফিসে কাজ করে বাসায় এসে একটু শান্তি এবং আনন্দের মাধ্যম হিসেবে সিরিজ দেখা। অথবা কোনোটাই নয়। নেহাৎ বিনোদনের জন্য দেখা। বিশেষ করে, তরুণদের মাঝে সিরিজ এখন অন্যতম আড্ডার বিষয়-বস্তু। স্কুল, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সিরিজের গল্প, পেছনের রহস্য, কিংবা সিরিজে দেখানো টাইম ট্রাভেল নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে, কিংবা তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র (Second Law of Thermodynamics) লঙ্ঘন করে টাইম ট্রাভেল করা আসলেই সম্ভব কিনা, রীতিমতো সব কিছু নিয়ে চলে বিশ্লেষণ। বর্তমান সময়ে নেক্সট জেনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব সিরিজ তৈরি হচ্ছে, যা রীতিমত কল্পনাকেও হার মানাবে। এমন সব সিরিজ রয়েছে, যাতে দেখানো হয়েছে, সৌরজগতের অন্য গ্রহতে বাস করা এলিয়েন এবং মানুষ একসঙ্গে বসবাস করছে! তাও আবার একই কলোনিতে। শুধু কি তাই? এমন সব গল্প নিয়ে সিরিজ, যা ‘অদ্ভুত’ শব্দকেও হার মানাবে। এই যে ধরুন, আপনার কোন প্রিয়জন চিরতরে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর পর আপনার স্বজনরা তাকে দেখতে পারবে, এমনকি কথাও বলতে পারবে। কিন্তু সেই জন্য একটি এটিএম কার্ডের মধ্যে টাকা রিচার্জ করতে হবে। যতক্ষণ কার্ডে টাকা থাকবে, প্রিয়জনরা মোবাইল কিংবা টিভিতে সব সময় আপনাকে লাইভ দেখতে পারবে, এমনকি কথাও বলতে পারবে। টাকা শেষ, সংযোগও শেষ। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? তাও আবার মৃত্যুর পর! এসব অবাস্তব কাহিনী নিয়ে বানানো হয়েছে অনেক সিরিজ। দর্শকদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে অদ্ভুত এসব ফ্যান্টাসি সিরিজ।
সাম্প্রতিক সময়ে, সিরিজ-ভক্তদের মধ্যে একটি হট টপিক হচ্ছে ২১ শতকের সেরা টিভি সিরিজ কোনটি? উত্তরে অনেকে হয়তো বলবেন ব্রেকিং ব্যাড, গেম অব থ্রোনস, ব্ল্যাক মিরর, ডার্ক, ব্যান্ড অব ব্রাদার্স কিংবা স্ট্রেঞ্জার থিংস। কিন্তু এমন কিছু আন্ডার-রেটেড সিরিজ রয়েছে, যেগুলো সত্যিকারর্থে দর্শকদের মনোযোগ পাওয়ার আসল দাবিদার।
আপনি যদি ভিন্নধর্মী কিছু দেখতে চান অথবা ক্লাসি কিছু সিরিজ, তাহলে এই লিখা আপনার জন্য। আজ এমন ৫টি আন্ডার-রেটেড সিরিজ নিয়ে রিভিউ দেয়া, যেগুলা আইএমডিবি কিংবা বিবিসি’র তালিকা থেকে নেয়া হয়নি। বরং সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য সিরিজ লাভারদের পরামর্শ, তথ্য- উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ৫টি আন্ডার-রেটেড সিরিজ নিয়ে রিভিউ’র প্রথম পর্ব।
১. টালসা কিং
৮০ ও ৯০ এর দশকের অন্যতম সফল অ্যাকশান হিরো ” সিলভেস্টার স্ট্যালোন”। অনেকে স্ট্যালোনকে চিনেন ‘রকি’ নামে। তবে স্ট্যালোন কিংবদন্তি ‘র্যাম্বো’ চরিত্রের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। সিনেমা প্রেমীদের জন্য র্যাম্বো এখনও দুর্ধর্ষ এক নাম। তবে ২০২২ সালে স্ট্যালোন অভিনয় করেন ভিন্ন আঙ্গিকে। জীবনের লম্বা সময় মুভিতে অভিনয় করার পর, ‘টালসা কিং’ সিরিজ তার প্রথম টেলিভিশন শো । ভিন্ন মাধ্যম, কিন্তু সেই আগ্রাসী অ্যাকশান প্যাকড স্টাইলে স্ট্যালোন। ‘টালসা কিং’ সিরিজটি মূলত মাফিয়া ক্রাইম ড্রামা ধারার। স্ট্যালোন ২৫ বছর জেলে থাকার পর মুক্তি পান। মাফিয়া ক্যাপ্টেন স্ট্যালোন জেল থেকে বের হয়েই দেখা করেন তার বসের সাথে। মাফিয়া বস তাকে দায়িত্ব দেন টালসা, অক্লহমা শহরে যেতে। তিনি টালসা গিয়েই তৈরি করেন ক্রিমিনাল সংগঠন। সিলভেস্টার স্ট্যালোন তার চার্ম ও অভিনয় দিয়ে সিরিজটিকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।
২. ওয়ারিওর
মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট ব্রুস লি’র নাম সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। ‘ওয়ারিওর’ ক্রাইম ড্রামা ধারার এই সিরিজটি প্রকৃতপক্ষে মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট ব্রুস লি’র কাহিনী থেকে নেয়া হয়েছে। সিরিজটির স্রষ্টা ও লেখক জোনাথন ট্রপার। গল্প শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোতে। ১৮৫০ সালের দিকে, একজন মার্শাল আর্টিস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোতে আসেন তার বোনকে খুঁজতে। এরপর তিনি ঘটনাক্রমে জরিয়ে পড়েন সান ফ্রান্সিস্কোর ‘চীনা টাউন’র সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্রাইম ফ্যামিলির সাথে। সিরিজটির প্রথম কয়েকটি পর্ব ধীর গতিতে চললেও, পরবর্তী পর্বগুলো অ্যাকশান প্যাকড। ওয়ারিওর সিরিজের প্রত্যেকটি অ্যাকশান দৃশ্য, টেলিভিশন ইতিহাসে এর আগে আর কোনো সিরিজে দেখানো হয়নি। এখন পর্যন্ত সিরিজটির তিনটি সিজন বের হয়েছে।
৩. রিচার
২০১২ সালে জনপ্রিয় অ্যাকশান হিরো ‘টম ক্রুজ’ জ্যাক রিচার মুভিতে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু অরিজিনাল বইয়ে ‘জ্যাক রিচার’ চরিত্রের উচ্চতা ৬ ফিট ৫ ইঞ্চি। কিন্তু বাস্তবে টম ক্রুজের শারীরিক উচ্চতা ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি। যে কারণে, ভক্তদের সমালোচনার তোপে পড়ে সিনেমাটি। এরপর, ২০২২ সালে ‘রিচার’ গল্পটি সিরিজ আকারে আমাজন প্রাইমে মুক্তি দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১২ সালের ‘জ্যাক রিচার’ মুভি অপেক্ষা ‘রিচার’ সিরিজটি ভক্তদের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সিরিজে জ্যাক রিচারের চরিত্রে রয়েছেন ‘অ্যালান রিচসন’। তার উচ্চতা ৬ ফিট ২ ইঞ্চি, যা অরিজিনাল বইয়ের চরিত্রের কাছাকাছি। অ্যাকশান থ্রিলার ‘রিচার’ সিরিজটি ১৯৭৭ সালে লিখা বই ‘জ্যাক রিচার’ থেকে নেয়া হয়েছে। মূলত, জ্যাক রিচার একজন প্রাক্তন ইউএস সেনাবাহিনীর অফিসার। রিচার জর্জিয়ার মারগ্রাভ শহরে ঘুরতে যান। কিন্তু তাকে লোকাল পুলিশ একটি খুনের দায়ে গ্রেফতার করে। সেই থেকেই শুরু ঘটনা। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে জরিয়ে পড়েন অনেক সংঘর্ষে। টেলিভিশনে ‘রিচার’ সিরিজটির মতো এতো ভয়াবহ অ্যাকশান এর আগে খুব একটা দেখা যায় নি। প্রথম সিজন সর্বমোট ৮ টি এপিসোড রয়েছে। প্রত্যেকটি পর্বের অ্যাকশান দর্শককে মুগ্ধ করবে।
৪. আপলোড
আপলোড একটি সায়েন্স ফিকশান কমেডি সিরিজ। আপলোড সিরিজে মূল চরিত্রে রয়েছে নাথান ব্রাউন, যিনি গল্পে ২০৩৩ সালের একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। হঠাৎ একদিন ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু হয় নাথানের। অদ্ভুত হলেও সত্য, নাথান ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে দিয়ে জীবিত থাকতে সক্ষম হন। কিন্তু নাথানের ভার্চুয়াল জগতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা থাকে তার প্রেমিকা ইংগ্রিডের হাতে। বস্তুত নাথান তার ভার্চুয়াল জীবনে কথা বলতে পারেন, চলতে-ফিরতে পারেন। ভার্চুয়াল কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার কর্মীর সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারেন। সবকিছু সম্ভব, কিন্তু সর্ত একটাই। নাথানের পরিবারের সদস্যদের টাকা দিয়ে ভার্চুয়াল সার্ভিস সক্রিয় রাখতে হবে। একটি এটিএম কার্ডের মধ্যে টাকা রিচার্জ করতে হবে, যতক্ষণ কার্ডে টাকা থাকবে, নাথানের প্রিয়জনরা মোবাইল কিংবা টিভিতে সব সময় তাকে লাইভ দেখতে পারবে, এমনকি কথাও বলতে পারবে। টাকা শেষ, সংযোগও শেষ। অদ্ভুত এই সিরিজ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখার জন্য গল্পে রয়েছে অনেক টুইস্ট।
৫. টোকিও ভাইস
টোকিও ভাইস একটি আমেরিকান ‘ক্রাইম ড্রামা’ ধারার টেলিভিশন সিরিজ।। একই শিরোনামের ২০০৯ সালে জেক অ্যাডেলস্টেইনের লেখা বইয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় টেলিভিশন সিরিজটি।
সিরিজটির কাহিনী শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, আমেরিকান সাংবাদিক জ্যাক অ্যাডেলস্টেইন টোকিওতে স্থানান্তরিত হয়েছেন। জাপানের একটি প্রধান সংবাদপত্রে সাংবাদিক হিসাবে যোগদানের সুযোগ পেতে জাপানি ভাষায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সে জন্য তিনি দিনরাত জাপানি ভাষা শেখা শুরু করেন। কারণ- সংবাদপত্রের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জাপানি ভাষায়। এদিকে, জাপানের প্রধান সংবাদপত্রে চাকরি পেতে হলে, যেতে হবে অসম্ভব প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। এদিকে, জাপানে এসে বর্ণবাদের স্বীকার হন অ্যাডেলস্টেইন। তাকে ‘গাইজিন’ বলে ডাকে জাপানিরা, যার অর্থ বিদেশী। কিন্তু তিনি প্রথম বিদেশী বংশোদ্ভূত সাংবাদিক হয়ে জাপানি সংবাদপত্রে চাকরি পান। একেবারে নীচের পদ থেকে শুরু করেন সাংবাদিকতা। সময়ের সাথে সাথে জাপানি পুলিশের সাথে যুক্ত হয়ে শুরু করেন টোকিওর সবচেয়ে শক্তিশালী মাফিয়া গ্যাং ইয়াকুজা পরিবারের ক্রাইম অন্বেষণ। সিরিজের প্রথম সিজনে, ৮টি এপিসোড রয়েছে। প্রত্যেকটি এপিসোডে জাপানিস এবং ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ রয়েছে। সিরিজ যত সামনের দিকে যায়, তত বেশি রোমাঞ্চকর হয়ে উঠে।
Leave a reply