১০ বছরে বিআরআই: যোগাযোগ ও প্রযুক্তিসহ নানাক্ষেত্রে কাজ করছে বেইজিং-ঢাকা

|

চীনের ঋণে শুরু করা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। ছবি: সংগৃহীত।

রিমন রহমান:

দশ বছর পার করলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগের আওতায় শুধু যোগাযোগই নয়; প্রযুক্তি বিনিময়, অবকাঠামোসহ নানাক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করছে চীন ও বাংলাদেশ।

বিআরআইর আওতায় ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এসে ৪০ বিলিয়ন ডলার দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে দেশটি। পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে ১০টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, ৮ম বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশীপ সেতু উল্লেখযোগ্য।

দেশীয় প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মোট ঋণে চীনের অংশীদারিত্ব কম। পর্যালোচনা করে যৌথ বিনিয়োগ হলে বাড়বে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চীনা এই উদ্যোগকে আমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করি, তাহলে কাজে লাগবে। কিন্তু আমাদের এখানে ভূ-রাজনীতিটা গুরুতর। আমরা চীনের সাথে সরাসরি কোনো কানেক্টিভিটি করতে পারিনি। চীনের ইচ্ছা আছে। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমার, এ দুই দেশের একটি আমাদের জন্য সমস্যা।

এদিকে, চীনের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নকে ‘ঋণ ফাঁদ’ বলছেন কেউ কেউ। চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ঝুঁকিতে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। দেশ দুইটিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ঋণ নির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বেশ। সেক্ষেত্রে বিআরআই এর আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন কতটা ঝুঁকি তৈরি করবে?

ঋণ নেয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশকে দেয়া শীর্ষ ঋণদাতা পাঁচটি সংস্থা ও দেশের মধ্যে সবার নিচে রয়েছে চীন। ফলে ঋণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করবে না এই দেশ।

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, বাংলাদেশের মোট ঋণের ৭-৮ শতাংশ ঋণ চীন থেকে নেয়া হয়েছে। চীন থেকে নেয়া ঋণের কারণে বাংলাদেশ বিপদে পড়বে, তা কেবল এখন না, ভবিষ্যতেও আমরা দেখছি না। উভয় দেশ এই প্রকল্প মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করবে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে।

বলা হচ্ছে, বিআরআই উদ্যোগ ত্বরান্বিত হলে ২ শতাংশ বাড়বে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি। দারিদ্র্য কমবে ১ দশমিক ৩ ভাগ। কিন্তু চীনের অর্থায়নের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, ঋণ পরিশোধের সময় ও গ্রেস পিরিয়ড যদি লম্বা সময় ধরে থাকে এবং সুদের হার আরও কম হলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্তত ৭৫টি দেশকে বিআরআই এর মহাপরিকল্পনার আওতায় নিয়েছে চীন। এদিকে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ, অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে সরকার। সেক্ষেত্রে বিআরআই হতে পারে অর্থের অন্যতম উৎস।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply