তাড়াহুড়ো করে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনে পার পাওয়া যাবে না: মির্জা ফখরুল

|

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করে পার পাওয়া যাবে না। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পুরনো পল্টনে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রাম গিয়ে নতুন শব্দ দেখলাম ‌’সফট উদ্বোধন’। বিমানবন্দরের রানওয়ে হয়নি, বড় বড় ভবনের কিছুই হয়নি কিন্তু উদ্বোধন করতে হবে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি কিন্তু তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধন করতে হবে। এই উদ্বোধনে কাজ হবে না। এই প্রস্তর লাগিয়ে কাজ হবে না। এই প্রস্তর এখন মানুষের বুকের প্রস্তর হয়ে গেছে। পাথরের মতো চেপে বসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রমাদ গুনছে, বিশেষ করে গার্মেন্টস মালিকরা। তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। প্রতিমাসে এক থেকে দেড় বিলিয়ন করে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তাকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, তাহলে তেল আনা বন্ধ করে দেই? খাবার আনা বন্ধ করে দেই? আমি বলি, তাহলে তুমি সরকারে থাকবে কেনো? তুমি দেশ চালাতে পারো না। মানুষকে খাবার দিতে পারো না, জোর করে তোমার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে আপনারা এমন কথা বলছেন যা মুখে আনা যায় না। এতোই অশালীন ও অরুচিকর কথা। আপনি যে তার মৃত্যু চান, তাকে হত্যা করতে চান তা আপনার কথায় পরিস্কার যে, আর কতোদিন বাঁচবে? বাঁচানেওয়ালা, মারনেওয়ালা আল্লাহ। এবার বলতে চাই আপনাকেও গুনতে হবে আপনি কতো ক্ষমতায় থাকতে পারেন? জনগণ আপনাকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনারা বলেন খেলা হবে। আরে কার সাথে খেলবেন? যাদের সাথে খেলবেন তাদের সবাইকেই তো জেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসব কথা প্রতারণা। মানুষকে কথা দিয়ে বোকা বানানো। তাদের চিন্তা ওয়াক ওভার দিয়ে আবার ক্ষমতা দখল করা। এটা করতে গিয়ে এবার তাদের ওপর কিছু বাধা এসেছে। কোথা থেকে এসেছে? পশ্চিমা বিশ্বের কিছু গণতান্ত্রিক দেশ বাধা দিয়েছে। তারা বলেছে ২০১৪ আর ২০১৮ এর নির্বাচন আর চলবে না। এবার একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে।

সরকার আবার ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চায় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যারা সরকারে আছে তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। জনগণকে মিথ্যা কথা বলে, প্রতারণা ও ছলচাতুরি করে দু’টো নির্বাচনে কোনো ভোটার উপস্থিতি ছাড়াই নিজেদের জয়ী ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তারা। তারা ২০২৪ সালে নির্বাচন করে আবার একই কায়দায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। ২০১৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে ভোটে গিয়েছিলাম। তিনি ওয়াদা করেছিলেন নির্বাচনে যারা আসবে তাদেরকে সমান সুযোগ দেয়া হবে। অর্থাৎ লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। পুলিশি হয়রানি থাকবে না। কিন্তু সারাবিশ্ব দেখেছে, জাতি দেখেছে তারা আগের রাতে ব্যালট ভর্তি করেছে। এখন আবার তারা আওয়াজ দিচ্ছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবো। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবো।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপির ৪৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার। ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। হাজার হাজার মানুষকে সরকার হত্যা করেছে। কারও কারও নামে চারশোটি মামলাও রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নামেও ৩৬টি মামলা করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও আছে ৯৮টি মামলা। বিএনপির সব স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নামে অসংখ্য মামলা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এতদিন এসব মামলা ফেলে রাখা হয়েছে। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে এসব মামলার নিষ্পত্তি করার তোড়জোর ততো শুরু হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দিতে সরকার বিশেষ সেল গঠন করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে দ্রুত সময়ে সাজা দিতে হবে, পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত সময়ে চার্জশিট দিতে। আবার বলে নাকি তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে!

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বলে দিয়েছি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই সব দলকে নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের একটাই দাবি সেটি হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। সংসদ বিলুপ্ত করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ ভালো নেই। এবিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। চালের দাম ৯০ টাকা। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আজকে মা তাদের সন্তানদের হাতে খাবার তুলে দিতে পারে না। রিকশাচালক, শ্রমিক, দিনমজুর, গার্মেন্টসে কর্মরত মানুষজন জীবন চালাতে পারছে না। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত যারা মুখ খুলে কথা বলতে পারেন না তারাও অনেক কষ্টে আছেন।

এসময় গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুর বক্তৃতা করেন।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply