ইসরায়েল প্রশ্নে আবারও নিজেদের একচোখা নীতি স্পষ্ট করলো যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় নির্বিচারে মানুষ মরলেও চলমান আগ্রাসন থামানোর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই দেশটির। উল্টো ইসরায়েলের সুরক্ষাই তাদের মূল চিন্তা।
গাজায় উত্তেজনার মধ্যে অন্য কেউ যাতে তেলআবিবে হামলা না চালায়, তা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতিও বাড়িয়েছে মার্কিনীরা। চলছে কূটনৈতিক তৎপরতাও। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এভাবেই ইহুদি রাষ্ট্রটির অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
ইতোমধ্যে ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরীও দেখা গেছে। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো অভিযানের জন্য নয় বরং ইসরায়েল-হামাসের চলমান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ভূমধ্যসাগরে মার্কিন রণতরী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সীমিত সক্ষমতার হামাসকে ঠেকাতে ইসরায়েল নিজেই যথেষ্ট। তাই ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনকে মোকাবেলায় নয় বরং সিরিয়া, ইরানসহ প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশ যাতে তেল আবিবের জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে তা নিশ্চিতেই সুরক্ষা বলয় তৈরির চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
এদিকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে গত কয়েকদিনে তেল আবিবসহ কয়েকটি শহরে সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী। মিত্র দেশের সুরক্ষায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে দৌঁড়ঝাপ করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও।
ইহুদি গোষ্ঠীর জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তৎপরতা থেকে শুরু করে ইসরায়েল জন্মের পর থেকেই তেল আবিবের পরম সহচর যুক্তরাষ্ট্র। মুখে সংকট সমাধানের চেষ্টার কথা বললেও, বরাবরই তেল আবিবের পক্ষে একচ্ছত্র সমর্থন দেখা গেছে দেশটির পক্ষ থেকে। চলমান গাজা-ইসরায়েল সংঘাতে আরও একবার তা স্পষ্ট হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ইসরায়েলের অধিকার আছে হামাসের হামলা থেকে আত্মরক্ষার। বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়ে আমরা কাউকে উস্কানি দিতে চাই না। বরং স্পষ্ট একটি বার্তা দিতে চাই যে, কেউ যেন এই সংঘাতের পরিধি না বাড়ায়। আর পরবর্তীতে কোনো দিক থেকেই যেন কেউ ইসরায়েলে আগ্রাসনের সুযোগ না পায়।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন একপেশে ভূমিকায় নাখোশ অনেক আরব দেশ। সিরিয়া, লেবানন ও ইরান মনে করে, অস্ত্র সরবরাহ করে ইসরায়েলের আগ্রাসনের অংশীদার হয়েছে মার্কিনীরাও।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এ বিষয়ে বলেন, ইহুদি বাহিনীর অপরাধের দায় নিতে হবে আমেরিকার সরকারকে। ফিলিস্তিনে আগ্রাসনে সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে ইসরায়েলের পাশে আছে তারা। আবার নৌপথে সামরিক বহরও পাঠিয়েছে তারা।
ইতিহাস বলছে, ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র। আরব প্রতিবেশীদের প্রতিটি হামলার সময় তেল আবিবের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। সংকটের টেকসই সমাধানে দুই-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও অনেকেই অভিযোগ করেন এর বাস্তবায়নে সদিচ্ছা নেই ওয়াশিংটনের।
/এমএইচ
Leave a reply