গাজায় আগ্রাসন : যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা গণনা হচ্ছে যেভাবে

|

গাজায় একটি হাসপাতালের দৃশ্য। ছবি: আল জাজিরা।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় কতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত মৃতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আন্তর্জাতিক মহলেও ওঠে নানা প্রশ্ন। তাহলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কীসের ওপর ভিত্তি করে এই সংখ্যা গণনা করে?

ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং বোমাবর্ষণের মাত্রা এতোটাই ভয়াবহ, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন বিচ্ছিন্ন , তখন একটি সুনির্দিষ্ট উত্তরে পৌঁছানো সহজ নয়।

এমন প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতেই বোধহয় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো হতাহতদের বিস্তারিত ২১২ পৃষ্ঠার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে দেয়া হয়েছে নিহত ফিলিস্তিনিদের নাম, আইডি নম্বর, বয়স এবং লিঙ্গ।

কীভাবে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায়?

গাজার হতাহতের খবর জানার প্রধান উৎস হল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা। গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের একটি অফিসরুমে বসে তিনি অন্য সব হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করেন। কোথায় কত জন ভর্তি, কতজন মারা গেলেন, গুরুতর আহত কতজন, সব লিপিবদ্ধ করেন তিনি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কতজন ওয়ার্ডে ভর্তি, আর কত জন মারা গেলেন, তা হিসাব করে রেকর্ড রাখেন তারা। পরবর্তীতে সেই তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাই করে সংরক্ষণ করা হয় কম্পিউটারাইজড ডেটা সিস্টেমে।

তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সংবাদমাধ্যম এপি’কে পাঠানো এক স্ক্রিনশটে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিস্টেমটি একটি কালার-কোডেড স্প্রেডশিটে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। এতে যেমন রয়েছে মৃতদের নাম, আইডি নম্বর, হাসপাতালে প্রবেশের তারিখ; তেমনি রয়েছে আঘাতের ধরণ এবং অবস্থা বর্ণনার জন্য আলাদা জায়গা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল-কিদরা বলেন, আহত ব্যক্তিদের নাম সবসময় পাওয়া কঠিন। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে আহত-নিহতের পরিচয় খুঁজে নিশ্চিত হওয়ার পরই তা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে নেয়া হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যদের সহায়তাও।

গাজার একটি হাসপাতালের পরিচালক আতেফ আলকাহলাউট বলেন, হাসপাতালে প্রবেশকারী প্রত্যেক ব্যক্তির রেকর্ড রাখা হয়। এ বিষয়টি দেখা হয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে।

হামাসের উচ্চ পর্যায় থেকেও গণমাধ্যমকর্মীদের কয়েক ঘণ্টা পর পর দেয়া হয় হতাহতের আপডেট। এতে পুরুষ, মহিলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক আহত ও নিহতের সংখ্যা দেয়া থাকে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে সামরিক বা বেসামরিক নিহতদের আলাদা করা হয় না। সাজোয়া যান, বিমান বা রকেট হামলায় কেউ নিহত হলেই তাদের ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন’র শিকার হিসাবে আখ্যা দেয় মন্ত্রণালয়। প্রতিটি তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিতের জন্য বেশ ঘাম ঝড়ালেও পশ্চিমাদের প্রশ্নবান থেকে মুক্ত হতে পারছে না এ তালিকা।

এমন পরিসংখ্যানকে হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল সরকারের লোকজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট তো রীতিমত এ তালিকাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। বলছেন, এসব হিসাবের কোনো ভিত্তি নেই।

যদিও রিচার্ড হেচটের কাছে প্রশ্ন ছিল, ফিলিস্তিনি হতাহতের কোনো সংখ্যা জানা আছে কি না? তবে, এর কোনো জবাব দেননি তিনি।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কারা কাজ করে?

গাজার শাসক কর্তৃপক্ষ হিসাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আছে হামাসের। তবে হামাস যেমন অন্য রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি চালায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। সেখানে যেমন হামাসের লোকজন আছেন, তেমনি আছেন ফাতাহ পার্টির লোকজনও।

পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফাতাহ পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীন আলাদা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রয়েছে, যা রামাল্লায় অবস্থিত। তারাই গাজাকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেতন দেয়।

রামাল্লার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা দুই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধান করেন। তিনি তার একজন ডেপুটি নিয়োগ করেছেন গাজায়। যার ফলে সব তথ্যও ঠিকঠাকভাবে এবং সমন্বয় করেই একটি জায়গায় এসে পৌঁছায়।

চলমান মৃতের সংখ্যার হিসেবে গড়মিলের অভিযোগে ঘি ঢেলে দেয় আল-আহলি হাসপাতালে হামলার ঘটনা। বিমান হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই জানানো হয়, নিহত হয়েছেন ৫০০ জন। পরদিন সংখ্যাটি কমিয়ে ৪৭১ করা হয়। এরফলেই পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহ প্রবল হয়ে ওঠে। তাদের ধারণা, সব ক্ষেত্রেই এভাবে মৃতের সংখ্যা বাড়িয়েছে হামাস। যা শুধুই আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি পাবার জন্য।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply