আপিল বিভাগের আদেশে তিন বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ৫ বছরের শিশু সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদ। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ওই শিশুর বাবা শাহিনুর টি আই এম নবী সপ্তাহে দুই দিন তাকে দেখতে যেতে পারবেন। সন্তানকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ায় শিশুটির বাবাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
এর আগে, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর শিশুটির মা সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। শাহিনুর যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন তা নিয়ে কঠোরভাবে সচেতন থাকতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয় ইমিগ্রেশন পুলিশকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ভারতের হায়দারাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয় সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুরের। বিয়ের পর এই দম্পতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে থাকেন কিছুদিন, এরপর চলে আসেন ঢাকায়। ২০১৮ সালে তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। তবে এরই এক পর্যায়ে সংসারে অশান্তির শুরু হয় এই দম্পতির। ভারতের নাগরিক সাদিকা সাঈদকে শাহিনুর মারধর করতেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
২০২১ সালের ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশুসন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস (অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা) রিট করে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী। হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টি আই এম নবী ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাইদকে ডিভোর্স দেন। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
ওই বছরই একপর্যায়ে তিন বছরের শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা শাহিনুর। পরে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা করেন শাহিনুর।
জানা যায়, শিশুকে নিয়ে তার বাবা অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হলে হাইকোর্ট তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি লাখ টাকা জরিমানা করেন। সম্প্রতি শিশুর বাবা দেশে ফিরে এসে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করেন শিশুর বাবা শাহিনুর টি আই এম নবী। শিশুটিকে মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার শর্তে আপিল বিভাগ তাকে জামিন দেন। তবে জরিমানার আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা।
এসজেড/
Leave a reply