রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্ধর্ষ চোর চক্র, মূলহোতা ‘ব্রিফকেস হান্নান’

|

ধরা পড়ার পর স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন 'ব্রিফকেস হান্নান'।

মনিরুল ইসলাম:

চলতি বছরের ১৬ মে। রাজধানীর সদরঘাটের উত্তরা ব্যাংক শাখায় চলছে লেনদেনের ব্যস্ততা। অন্যদিকে, বাইরে ওৎ পেতে আছে চোর চক্র। কিছুক্ষণ পর ব্যাংকের ভেতর ঢোকে চোরেরা। এরপর শুরু হয় তাদের মিশন। সোফা ও টেবিলের ওপর টাকা রেখে কাগজে লেখাজোকার কাজ শেষ করছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে একে একে বসে যায় চক্রের দু’জন। তাদের হাতে কাগজের শপিং ব্যাগ। এক পর্যায়ে আগেই ফুটো থাকা কাগজের ব্যাগের মধ্যে থেকে হাত গলিয়ে পাশে খাম কেটে কয়েকটি বান্ডিল বের করে নেয় চোরেরা। তিনটি বান্ডিল নিয়েই চম্পট দেয় তারা।

এই চক্রের প্রধানের নাম হান্নান। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা হান্নানকে বলে ‘ব্রিফকেস হান্নান’। মাসখানেক আগে ঢাকার বাইরে একটি দোকানে সহযোগীদের নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে ঢোকে হান্নান। ঠিক একই কায়দায় টেবিলের ওপর রাখা টাকার বড় খাম তার হাতের কাগজের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেয়। খাম কেটে দুই বান্ডিল টাকা বের করতে গেলে হাতেনাতে ধরে ফেলে দোকানদার। এরপর ভুক্তভোগীরা পিটিয়ে পুলিশে দেয় তাকে।

ধরা পড়ার পর ব্রিফকেস হান্নান জানান, আমার নামে ২৫-৩০টা মামলা আছে। প্রথমে আমি গিয়ে সালাম দেই, তারপর টার্গেট করা লোকের সাথে খাতির জমাই। আমার সহযোগীরা ব্যাগ সাথে করে আনে। তারা আড়াল করে রাখে ওই ব্যক্তিকে। পরে আমি কথা বলতে বলতে সুযোগ বুঝে তারা টাকা ও ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয়।

এই হান্নানকে নিয়ে কয়েক মাস তদন্ত করে পুলিশ বলছে, শুধু দুর্ধর্ষ চুরি নয়। প্রতারণা করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন হান্নান। ডিএমপির (ডিবি) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এরা দেশের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। হান্নান লিখিত বিয়ে করেছেন ৭-৮টি, অলিখিত বিয়ে করেছেন ২০টিরও বেশি। পুরান ঢাকায় তিনটি বাড়িও রয়েছে তার।

সারাদেশের বিভিন্ন থানায় এই চক্রের নামে অর্ধশতাধিক মামলা আছে। এদের অভিনব ও নীরব কৌশল দেখে গোয়েন্দা পুলিশের পরামর্শ, ব্যাংকে বা দোকানে টাকা জমা বা উঠানোর সময় সাবধান থাকতে হবে গ্রাহককে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে একবার ধরা পড়ার পর এই চক্র সম্পর্কে পুলিশ জানিয়েছিল– ‘ব্রিফকেস হান্নান’ মানত করেছিল, মোটা অঙ্কের টাকা চুরি করতে পারলে কিশোরগঞ্জের পাগলার মসজিদে একলাখ টাকা দান করবে। গত ১৫ রমজানে ন্যাশনাল ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার সামনে গাড়ির ভেতর থেকে সহযোগীদের সহায়তায় ৮০ লাখ টাকা চুরি করার পর তারা মানত শোধ করে পাগলার মসজিদে। এরপর পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে।  

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply