পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি: শিক্ষার আলোয় আলোকিত পাহাড়ি অঞ্চল

|

তানভীর মৌসুম:

শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে গেছে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। শিশুরা বাংলা, ইংরেজি শিখছে বাড়ির পাশের স্কুল থেকেই। শান্তিচুক্তির ধারা বাস্তবায়নের ফলে ব্যাপকভাবে বদলে গেছে পাহাড়ি জনপদের শিক্ষাব্যবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬তম বছরে পাহাড়ি জনপদে শিক্ষাব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন এসেছে।

একটা সময় পাহাড়ি জনপদে ছিল শুধু টিকে থাকার লড়াই। খাদ্যের যোগান দিতেই হিমশিম খেতো জুমচাষ প্রধান পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। এমনকি চাইলেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া ছিল দুরূহ ব্যাপার। সেখানেই এখন শিক্ষার দ্যুতি ছড়াচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত মুনলাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনইভাবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে শিশুরা। এখানকার শিক্ষা কার্যক্রমে বদলে গেছে এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান।

স্কুলটির সহকারী শিক্ষক রোজ মাউই বম বলেন, শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত হওয়ায় খুশি অভিভাবকরাও। শিশুরা এখন বাংলা শিখছে, বাংলা ভাষায় পারদর্শীও হয়ে উঠছে।

শিশুদের জন্য সুযোগ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি শেখার সুযোগও তৈরি হয়েছে। শিক্ষকও নিজস্ব জনগোষ্ঠীর হওয়ায় পাঠদান পদ্ধতি আরও সহজ হয়েছে। কল্পনাতীতভাবে এই পাহাড়েই উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার আধুনিকায়ন ও সহজলভ্যতাও নিশ্চিত হয়েছে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সহাবস্থান বিরাজমান থাকায় এখানে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ সহজ হয়েছে। একই কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষক সাইং সাইংউ নিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে একটি পরিবারের মতো। তাই এলাকার উন্নয়নে প্রত্যেকেই নিজের জায়গা থেকে কাজ করতে পারি।

সরকারের সদিচ্ছায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ফলেই শিক্ষার এমন প্রসার সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও উপকারভোগীরা।

এ নিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, উপজেলাগুলোতে আগে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ছিল না। সেখানে এখন স্কুলের পাশাপাশি কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার বিস্তর সুযোগ পাচ্ছে।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, শান্তিচুক্তি হওয়ার কারণেই শিক্ষার এই বিস্তার ঘটেছে পার্বত্য অঞ্চলে। পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয়ে এখানকার তরুণ সমাজ ভালো কর্মসংস্থানেরও সুযোগ পাচ্ছে।

শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চলে হাইস্কুলের সংখ্যা ছিল ১৯৬টি। চুক্তির পর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৪। সেনাবাহিনীর স্থাপন করা ও পরিচালনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে ২৩টি। সর্বমোট ৫৮টি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহায়তাও দিয়ে থাকে সেনাবাহিনী।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply